Verified By Apollo Dermatologist October 6, 2023
5957চুল একজন ব্যক্তির বাহ্যিক চেহারার একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বংশগতভাবে পাওয়া টাক (জিনবাহিত টাক পড়া) সবসময়ই উদ্বেগ বাড়ায়। চলুন জেনে নিই টাক পড়া এবং তার প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে।
ভারতে টাক পড়া কতটা সাধারণ? ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত একটি জনতাত্ত্বিক গবেষণা অনুসারে, প্রায় ৪৬% পুরুষই তাদের বয়স ২০-এর গোড়াতে থাকতেই চুল পড়া বা টাক পড়ে যাওয়ার সম্মুখীন হয়েছে। তারপর থেকে এর পরিমাণ তো কমেইনি, এর কারণটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পারিবারিক ক্ষেত্রে নিহিত হয়ে থাকে। যদি আপনার মায়ের পরিবারের বা পৈর্তৃক পরিবারের সদস্যদেরও টাক পড়ার সমস্যা থাকে তাহলে আপনার টাক পড়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। এই পরিবারিক ভাবে টাক পড়ার সমস্যাটিক অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়া বা পুরুষদের বৈশিষ্ট্যযুক্ত টাক বলা হয়। যদিও অ্যালোপেসিয়া (চুল পড়া) এর একাধিক কারণ থাকতে পারে, তবে পুরুষদের বৈশিষ্ট্যযুক্ত টাক সবচেয়ে সাধারণ কারণ।
আমাদের শরীরে চক্রাকার নিয়মে চুল গজায়। এটি চারটি পর্যায়ে বিন্যস্ত:
সুতরাং চুল পড়া একটি প্রাকৃতিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। চুল গজায়, আলগা হয়, পড়ে যায় এবং আবার বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এই চুলের এই অধিজনন চক্রের কারণে প্রতিদিন চুল পড়ার স্বাভাবিক পরিমাণ হল ৫০ থেকে ১০০ টি। কিন্তু যদি সংখ্যাটি এর বেশি হয়, তবে এই অবস্থাকে অ্যালোপেসিয়া বলা হয়। চুল পড়া বা অ্যালোপেসিয়া হল একটি ব্যাধি যা চুলের উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটায়। চুল পড়াকে কয়েকটি নির্দিষ্ট ধরণের মধ্যে বিভক্ত করা যেতে পারে:
কিছু ধরণের চুল পড়া শুরুতেই বন্ধ করা যেতে পারে তবে চিকিৎসা না করা হলে এর অবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না। উদাহরণস্বরূপ, ফ্রন্টাল ফাইব্রোসিং অ্যালোপেসিয়া বা চুলের রেখার বৃদ্ধি, এর স্থায়ী বিকৃতি রোধ করার জন্য প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসা করা প্রয়োজন। কখনও কখনও, অ্যালোপেসিয়া অন্যান্য অবস্থার ইঙ্গিত দিতে পারে। অতএব, অ্যালোপেসিয়ার প্রথম লক্ষণ দেখলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
টাক পড়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল জীনঘটিত, অর্থাৎ অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়া। এবং আপনার জিন নিয়ে সাধারণত কিছু করার উপায় আপনার হাতে নেই। তবে আরও ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে আপনি প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে পারেন।
চুল পড়ার সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রে উপস্থিত রোগীদের চুল পড়ার কারণ খুঁজে বের করতে কিছু পরীক্ষা করা দরকার।
স্কাল্প বায়োপসি: এই পরীক্ষায়, মাথার তালু থেকে চামড়ার কিছু অংশ নমুনা হিসাবে নেওয়া হয়।
মাথার ত্বকে ছত্রাকের মতো সংক্রামকের কারণে চুল পড়ছে কিনা তা জানার জন্য এটি একটি মাইক্রোস্কোপের নীচে রেখে পরীক্ষা করা হয়।
অল্প ক্ষমতার মাইক্রোস্কোপি: আপনার ডাক্তার আপনার চুলের নমুনা নিতে পারেন এবং আপনার চুল ভারসাম্যহীনতার কারণে পড়ছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য এটি একটি অল্প ক্ষমতার মাইক্রোস্কোপের নীচে পরীক্ষা করেন।
রক্ত পরীক্ষা: কখনও কখনও অন্যান্য অন্তর্নিহিত রোগের কারণেও চুল পড়ে যায়। আপনার ডাক্তার এই ধরনের অবস্থা নির্ণয় করার জন্য নির্দিষ্ট রক্ত পরীক্ষা করতে পারেন।
ওষুধ: কিছু ওষুধ কার্যকরভাবে চুল পড়ার চিকিৎসা করতে পারে। এই ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছে মিনোক্সিডিল এবং ফিনাস্টারাইড, এগুলি বিভিন্ন উপাদানের এবং বিভিন্ন ক্ষমতাধর হয়ে থাকে। কিছু স্প্রে এবং টপিকাল মলম পাওয়া যায় যাতে এই ওষুধগুলির মতো সমউপাদান একত্র করা থাকে। এই ওষুধগুলি অনেক রোগীর চুল পড়ার মতো সমস্যাকে কার্যকরভাবে সারিয়ে তুলেছে।
চুল প্রতিস্থাপনকারী অস্ত্রোপচার: স্থায়ী চুল পড়ার সমস্যা প্রতিরোধের জন্য এটি সবচেয়ে কার্যকর প্রতিকার। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ বা কসমেটিক সার্জনরা এইধরনের অস্ত্রোপচার করে থাকেন। এই অস্ত্রোপচারে, স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা জায়গা থেকে চুল নিয়ে টাক পড়া জায়গায় প্রতিস্থাপন করা হয়।
প্লেটলেট সমৃদ্ধ প্লাজমা (পিআরপি) থেরাপি: পিআরপি (প্লেটলেট সমৃদ্ধ প্লাজমা) চুল পড়ার থেরাপি হল একটি তিন-পদক্ষেপের চিকিৎসা। যেখানে একজন ব্যক্তির শরীর থেকে রক্ত টানা হয়, সেটা প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং তারপর মাথার তালুতে তা ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়।
পুষ্টিকর চুলের পরিপূরক: এটি টাক পড়ায় সহায়ক থেরাপি হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, যেখানে অ্যামিনো অ্যাসিড, সিবায়োটিন, খনিজ ইত্যাদি যুক্ত চুলের পরিপূরক ব্যবহার করা যেতে পারে
পরচুল: এগুলি হল আরও অস্থায়ী একটি সমাধান কিন্তু কম ব্যয়বহুল এবং বহুমুখী। মানুষের চুল দিয়ে তৈরি পরচুলের তুলনায় সিন্থেটিক পরচুলগুলি সাধারণত দামে সস্তা হয়। মানুষের চুল দিয়ে তৈরি পরচুলগুলি ব্যবহার করলে তা অনেক প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক দেখায় এবং এগুলি স্টাইল করা এবং পরিচর্যা করাও সহজ, কারণ পলিমারগুলি প্রাকৃতিক তন্তুগুলির নীচে দীর্ঘসময় ধরে এবং ভালভাবে পুরো কাঠামোটি ধরে রাখে।
উপসংহার
চুল পড়া আপনার শারীরিক রূপরেখাকে প্রভাবিত করে। সমস্যা এড়াতে অতিসত্ত্বর আপনার চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQS)
1. প্রতিদিন চুল পড়া কী স্বাভাবিক?
চুলের বৃদ্ধি একটি নির্দিষ্ট চক্র অনুসরণ করে। প্রতিদিন চুল গজায় এবং খসে যায়। তাই প্রতিদিন কিছু চুল পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু এই সংখ্যা 100 ছাড়িয়ে গেলে তার কারণ অনুসন্ধান হওয়া দরকার।
2. চুলের বৃদ্ধির জন্য ওষুধের ব্যবহার কী নিরাপদ?
চিকিৎসাগতভাবে, কোনো ওষুধই সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়। প্রতিটি ওষুধেরই কিছু না কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। মিনোক্সিডিল এবং ফিনাস্টারাইডেরও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। ঝুঁকি-প্রাপ্তি এই দুইয়েরই অনুপাত অনুমান করার পরে রোগীদের ওষুধ দেওয়া হয়। যদি ঝুঁকি বেশি থেকে যায় তবে সেই ওষুধ প্রত্যাহার করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, এই ওষুধগুলি স্প্রে বা টপিকাল মলমের আকারে আসে। প্রয়োগের এই পদ্ধতি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনেকাংশে প্রতিরোধ করে, কারণ ওষুধটি কেবলমাত্র মাথার ত্বকেই কাজ করে, কোনভাবেই রক্ত প্রবাহে পৌঁছায় না।
3. জোরে জোরে চাপ দিয়ে চুল আঁচড়ানো কী আমার মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে আমার চুলের উপর ভাল প্রভাব ফেলতে পারে?
এটি আংশিকভাবে ভুল। ভাল সঞ্চালন আপনার চুল স্বাস্থ্যকর করতে পারে, কিন্তু জোরালোভাবে চুল আঁচড়ানোতে এর বিপরীত হতে পারে। রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে চুলের তেল দিয়ে আপনার মাথার ত্বক ম্যাসাজ করতে পারেন। জোরালোভাবে চুল আঁচড়ানো আপনার চুলের ক্ষতি করে এবং চুল পড়া বাড়িয়ে দেয়।
The content is carefully chosen and thoughtfully organized and verified by our panel expert dermatologists who have years of experience in their field. We aim to spread awareness to all those individuals who are curious and would like to know more about their skin and beauty