Verified By Apollo Gynecologist October 6, 2023
4113হিস্টিরেকটমি হল জরায়ুর অপসারণের জন্য একটি সার্জারি। এই সার্জারির কারণগুলি হল :
জরায়ুর ফাইব্রয়েডগুলি যার জন্য মেয়েদের ব্যথা হয় এবং ঋতুস্রাবের অসুবিধা দেখা যায়
হিস্টিরেকটমিতে কখনো কখনো জরায়ুর পাশাপাশি ফ্যালোপিয়ান টিউব এবং ডিম্বাশয় (একটি বা দুটিই) বাদ দেওয়া হয়। এটাকে সম্পূর্ণ হিস্টিরেকটমি বলা হয়।
হিস্টিরেকটমি নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা আছে যেগুলি প্রকাশ্যে আসা উচিৎ। আজ, আমরা এই ভ্রান্ত ধারণা সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানব কিন্তু তার আগে হিস্টিরেকটমির বিভিন্ন প্রকারভেদ সম্পর্কে আমরা বোঝার চেষ্টা করব।
হিস্টিরেকটমি তিন প্রকারের হয়। রোগ এবং রোগীর অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসক যথোপযুক্তটি নির্বাচন করেন।
পেটের হিস্টিরেকটমি : এই পদ্ধতিতে আপনার সার্জেন আপনার পেটে ছয় থেকে আট ইঞ্চি কেটে তার মধ্য দিয়ে জরায়ুকে বের করেন। আপনার চিকিৎসক নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য আপনাকে এর সুপারিশ করতে পারেন:
প্রধান কাটা অংশটি উল্লম্ব আকৃতির হতে পারে – আপনার নাভি থেকে পিউবিক হাড় পর্যন্ত – অথবা অনুভূমিক আকৃতির – আপনার যৌনকেশের ঊর্ধ্বপ্রান্ত বরাবর।
যোনির হিস্টিরেকটমি : এক্ষেত্রে আপনার সার্জেন যোনিমুখের মাধ্যমে জরায়ুকে বের করেন। প্রায়শই এই পদ্ধতিটি জরায়ুর স্থানচ্যুতির চিকিৎসা অথবা এর সম্পর্কিত কোনো রোগের জন্য যখন যোনিপথের মেরামতি আবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়, তখন ব্যবহৃত হয়। যেহেতু এতে বাহ্যিক দিক দিয়ে কাটাছেঁড়া করা হয় না তাই কোনো দৃশ্যমান ক্ষতচিহ্ন থাকে না।
খুব কম ইনভেসিভ ল্যাপ্রোস্কোপিক হিস্টিরেকটমি: আপনার চিকিৎসক আপনার তলপেটে খুব ছোট একটি অংশ কেটে তার মাধ্যমেক জরায়ুকে বাদ দেন। আপনার নাভির মধ্যে কিছুটা কেটে সার্জেন একটি ল্যাপ্রোস্কোপ ( ভিডিও ক্যামেরা সহ একটি সরু নমনীয় নল) ঢুকিয়ে দেন। আপনার সার্জেন আপনার পেটে আরো অনেক ছোট ছোট অংশ কাটেন যাতে ছোট স্ক্যাল্পেল এবং অন্যান্য শল্য চিকিৎসার যন্ত্রপাতিগুলি ঢোকানো যায়। সার্জেন ল্যাপ্রোস্কোপ নল বা আপনার যোনির মাধ্যমে ধাপে ধাপে জরায়ুকে বাদ দেন।
খুব কম ইনভেসিভ রোবোটিক হিস্টিরেকটমি: আপনার সার্জেন ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতি, রোবোটিক প্রযুক্তি এবং উচ্চমানের 3D চৌম্বকীয়তার সমন্বয়কে ব্যবহার করে দেখেন, নিরীক্ষণ করেন এবং জরায়ু বাদ দেন। সাধারণত সার্জেন পেটে চার থেকে পাঁচটি ছোট অংশ কাটেন যাতে ছোটো রোবটের হাত এবং শল্যচিকিৎসার যন্ত্রপাতি আপনার জরায়ুতে পাঠানো যায়।
ভ্রান্ত ধারণা #1: হিস্টিরেকটমি যৌন জীবনের ক্ষতি করে
আসল বিষয়: মহিলারা প্রায়শই ভয় পান যে হিস্টিরেকটমির পরে তারা আর যৌন সঙ্গম করতে পারবেন না। কিন্তু হিস্টিরেকটমির পরে যৌন জীবন আরো উপভোগ্য হয়ে ওঠে। এর আগে মহিলাদের ঋতুস্রাব হয়, পেলভিক অঞ্চলে ব্যথা ও টান ধরে এবং এমতাবস্থায় যৌন সঙ্গম খুবই যন্ত্রণাদায়ক। তাই যখন আর ব্যথা থাকে না, তখন একজন মহিলার যৌন চাহিদা আরো বৃদ্ধি পায়।
হিস্টিরেকটমি কোনো মহিলার যৌন জীবনকে একেবারেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না কারণ এতে যোনি অক্ষত থাকে। যৌন সঙ্গমের সময়, যোনির সামনের অংশ থেকে স্নায়ুতে সংবেদনশীলতা পৌঁছায়। তাই জরায়ু বাদ দিলে মহিলাটির যৌন জীবন কখনোই ব্যাহত হয় না। হিস্টিরেকটমির পরে যদি ক্ষতচিহ্নযুক্ত কলা যোনিতে উপস্থিত থাকে তবে যৌন সঙ্গমের সময় ব্যাপক অসহনীয় ব্যথা হতে পারে। কিন্তু এটা একটা সার্জারি সংক্রান্ত জটিলতা যা সাধারণত হয় না।
ভ্রান্ত ধারণা #2: সার্জারির ঠিক পরেই মেনোপজ শুরু হয়ে যাবে
আসল বিষয়: যদি কোনো মহিলার ডিম্বাশয় বাদ না দেওয়া হয় তবে হিস্টিরেকটমি মেনোপজের কারণ নয়। 40 বছরের পর মহিলাদের শরীরের ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ কমতে শুরু করে। আর যখন তাঁরা পঞ্চাশে পৌঁছান তখন এই হরমোন নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়। ডিম্বাশয় এই হরমোনগুলি তৈরি করে। সাধারণত, হিস্টিরেকটমিতে জরায়ু বাদ দেওয়া হয়, ডিম্বাশয় নয়। সার্জারির সময়ে ডিম্বাশয়ও বাদ দেওয়া হতে পারে, কিন্তু এটা কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রেই হয়। হিস্টিরেকটমির ফলে মেনোপজ তখনই হতে পারে যদি জরায়ুর পাশাপাশি দুটি ডিম্বাশয়ও বাদ দেওয়া হয়।
যাইহোক, হিস্টিরেকটমির পরে একজন মহিলার ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। এর মানে এই নয় যে তার মেনোপজ শুরু হয়। একজন মহিলার কেবলমাত্র তখনই মেনোপজ হতে পারে যদি তার শরীর স্বাভাবিক নিয়মে ইস্ট্রোজেন উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।
ভ্রান্ত ধারণা #3: এটি একটি জটিল সার্জারি যা থেকে সহজে সুস্থ হওয়া যায় না।
আসল বিষয়: একটি সফল হিস্টিরেকটমির পরে রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম হতে পারে। এটা সাধারণত নির্ভর করে যে কী ধরণের হিস্টিরেকটমি করা হচ্ছে। সেরে ওঠার সময়কাল মূলত ছয় সপ্তাহ। যোনির হিস্টিরেকটমিতে রোগী সার্জারির পর সবচেয়ে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। কোনো দৃশ্যমান ক্ষতছিন তৈরি না করেই যোনির মাধ্যমে জরায়ুকে বাইরে বের করে আনা হয়। এই ধরণের হিস্টিরেকটমিতে রোগীকে এক থেকে দুইদিন হাসপাতালে থাকতে হতে পারে এবং সুস্থ হতে সাধারণত দুই থেকে চার সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
ল্যাপ্রোস্কোপিক হিস্টিরেকটমি এবং রোবোটিক বিকল্পগুলি এখন হিস্টিরেকটমিকে আরো সহজ করে তুলেছে এবং তার সঙ্গে আছে কম কাটাছেঁড়া, হাসপাতালে থাকা ও যন্ত্রণা।
ভ্রান্ত ধারণা #4: সার্জারির পরে সুস্থ না হওয়া অবধি আপনার বিছানা থেকে ওঠা উচিৎ না।
আসল বিষয়: সার্জারির পরে কিছুটা হাঁটাহাঁটি করলে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়। সার্জারির অব্যবহিত পরেই আপনার হাঁটা উচিৎ নয়। আপনার স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে আপনার ডাক্তার আপনাকে সুপারিশ করবেন যে আপনার কখন এবং কতক্ষণ হাঁটা উচিত। সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকলে ক্ষতস্থানের আশেপাশে রক্তের দলা পেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। হাঁটলে সাধারণ রক্তপ্রবাহ হয় যা ক্ষতটিকে দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
হিস্টিরেকটমির পরে আপনি হাঁটতে পারেন। আপনি প্রতিদিন হাঁটার সময় একটু করে বাড়াতে পারেন। কিছুদিন পর থেকেই আপনি সাধারণ জীবনযাপন করতে পারবেন।
ভ্রান্ত ধারণা #5: হিস্টিরেকটমি আপনার যোনিকে বাইরে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করে।
আসল বিষয়ঃ সত্য ঘটনা হল – হিস্টিরেকটমি যোনির বিচ্যুতির চিকিৎসা করে। যখন যোনির সাহায্যকারী পেশী দুর্বল হয়ে যায় বা ভেঙে যায় তখন যোনি বেরিয়ে আসে। একে বলা হয় যোনির বিচ্যুতি। ঝুলন্ত যোনির কারণেও জরায়ুর অবস্থান পালটে যেতে পারে। স্থূলত্ব, ধূমপান, যোনিপথে প্রসব অথবা মেনোপজ যোনির বিচ্যুতির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
ভ্রান্ত ধারণা #6: সার্জারির ফলে একটা বড় ক্ষতচিহ্ন হবে।
আসল বিষয়ঃ সার্জারির পরে ক্ষতচিহ্ন থাকতেও পারে, নাও পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমন একটা ক্ষতচিহ্ন তৈরি হয় যা সহজেই সেরে যায়। হিস্টিরেকটমির পরে ক্ষতচিহ্নের আকার নির্ভর করে সার্জারির ধরণের উপর। যোনির হিস্টিরেকটমিতে অনেকগুলি ছোট ছোট কাটা অংশ থাকে যার জন্য ভয় লাগতে পারে কিন্তু সেগুলি অভ্যন্তরীণ হবার কারণে দেখা যাবে না। ল্যাপ্রোস্কোপিক হিস্টিরেকটমিতে সাধারণত কোনো ক্ষতচিহ্ন থাকে না।
পেটের হিস্টিরেকটমিতে বড় করে কাটা হয় এবং ক্ষতচিহ্নটাও কিছুটা বড়। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এরও চিকিৎসা সম্ভব। নানা রকম উপায়ে আপনি এর থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
ভ্রান্ত ধারণা #7: আমার সমস্যার সমাধানের একমাত্র উপায় হল হিস্টি্রেকটমি।
আসল বিষয়ঃ সাধারণত এটি রোগ এবং তার কারণের উপর নির্ভর করে। কিছু ক্ষেত্রে হিস্টিরেকটমির কোনো দরকার পড়ে না। হিস্টিরেকটমি শেষ বিকল্প। যদি অন্য কোনো উপায়ে চিকিৎসা করা সম্ভব হয় তবে বিনা কারণে কখনোই এটা করা হয় না। রোগীর যদি জরায়ুর ক্যান্সার থাকে বা অস্বাভাবিক রক্তপাত হয় তবে তৎক্ষণাৎ রোগীর চিকিৎসা দরকার। এই ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব হিস্টিরেকটমি করা হয়।
জরায়ুর বিচ্যুতির ক্ষেত্রে কিছু শারীরিক থেরাপির ব্যবহার করা যেতে পারে। এই থেরাপিগুলির মাধ্যমে উত্থিত বা পড়ে যেতে বসা জরায়ুর সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। যদি কোনো রোগীর এন্ডোমেট্রোসিস থাকে তবে ওষুধ বা অন্যান্য সার্জারির মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা সম্ভব। যদি সব বিকল্পই ব্যর্থ হয়ে যায়, তখনই একমাত্র হিস্টিরেকটমির কথা ভাবা হয়।
The content is verified by our experienced Gynecologists who also regularly review the content to help ensure that the information you receive is accurate, evidence based and reliable