Verified By Apollo General Physician April 11, 2024
4623ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতা দেখা দেয় ক্ষুদ্রান্ত্র যথেষ্ট ল্যাকটেজ তৈরি করতে না পারলে, দুধের মধ্য থাকা শর্করা হজম করার জন্য একটি এনজাইম (ল্যাকটোজ)। যদি আপনার বা আপনার প্রিয়জনদের ল্যাকটেজের ঘাটতি হয়, তবে খাবারের মধ্যে থাকা ল্যাকটোজ প্রক্রিয়াজাত ও শোষিত হওয়ার পরিবর্তে আপনার কোলনে চলে যায়। এবং আপনার কোলনে থাকা সাধারণ ব্যাকটেরিয়া ওই অপাচ্য ল্যাকটোজের সঙ্গে ক্রিয়া করে, যার ফলে ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতার লক্ষণগুলি এবং উপসর্গসমূহ দেখা দেয়।
দুধ খাওয়ার বত্রিশ ঘণ্টা পর পেটে অস্বস্তি হলে ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতা রয়েছে তা নির্ণয় করা যেতে পারে। অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে পেট ফোলাভাব, ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা এবং ব্যথা।
বয়স, বংশগতির ধারা এবং অন্ত্রের রোগের মতো কারণগুলির কারণে ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতা দেখা দেয়। ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতা সমস্যাটির কোন প্রতিকার নেই, তবে আপনি কিছু সতর্কতামূলক পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে এটির পরবর্তী প্রভাবগুলি কম করতে পারেন।
ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতা আছে কিনা তা বোঝার উপায়সমূহ
দুধের মধ্যে থাকা শর্করা হজম করতে না পারাকে ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতা বলে। এই সমস্যাটি মানুষের জন্য প্রাণনাশক না হলেও পরিপাকতন্ত্রে অস্বস্তির কারণ হয়।
যখন আমরা দুধ পান করি তখন আমাদের শরীর এটি হজম করার জন্য ক্ষুদ্রান্ত্রে ল্যাকটেজ উৎসেচক সংশ্লেষ করে। ল্যাকটোজ হল দুধে উপস্থিত শর্করা এবং ল্যাকটেজ উৎসেচকগুলি এর উপর কাজ করে এটিকে গ্লুকোজ এবং গ্যালাকটোজে রূপান্তরিত করে। গ্লুকোজ এবং গ্যালাকটোজ ক্ষুদ্রান্ত্রে শোষিত হয় এবং রক্ত প্রবাহে পৌঁছায়।
যদি আমাদের শরীরে ল্যাকটেজ এনজাইম পর্যাপ্ত পরিমাণে সংশ্লেষিত না হয় তবে ল্যাকটোজ হজম হয় না। হজম না হওয়া ল্যাকটোজ ক্ষুদ্রান্ত্রে পৌঁছায় এবং ক্ষুদ্রান্ত্রে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া ল্যাকটোজকে জৈব অ্যাসিড এবং উপজাতে রূপান্তরিত করে। এর ফলে আমাদের শরীরে ডায়রিয়া, ফোলাভাব, এবং পেট কামড়ানোর মত সমস্যাগুলি দেখা দেয়।
লক্ষণসমূহ
ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতা আপনার রয়েছে কিনা তা সনাক্ত করা যেতে পারে যদি দুগ্ধজাত দ্রব্য খাওয়ার পরে আপনার নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি থাকে।
ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতার লক্ষণগুলির তীব্রতা দুগ্ধজাত দ্রব্য খাওয়ার পরিমাণ এবং আপনার শরীরের ল্যাকটোজ হজম করার ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে পারে। কিছু মানুষ কোনো লক্ষণ ছাড়াই প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ পান করতে পারেন আবার অন্য কারো ক্ষেত্রে অল্প কয়েক মিলিলিটার দুধও তারা হজম করতে পারবেন না।
কারণসমূহ
দুই ধরনের ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতা রয়েছে – মুখ্য অসহিষ্ণুতা এবং গৌণ অসহিষ্ণুতা।
মুখ্য ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা: এটি ল্যাকটেজ উৎসেচক সংশ্লেষণ হ্রাসের কারণে সৃষ্ট সবচেয়ে সাধারণ ধরনের অসহিষ্ণুতা। মুখ্য ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা বয়স এবং জাতিগত কারণে ঘটে। প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের এই প্রকার ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা দেখা যায়।
গৌণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা: এই ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা ঘটে যখন ক্ষুদ্রান্ত্রে আঘাত, অসুস্থতা বা অস্ত্রোপচারের ফলে ল্যাকটেজের উৎপাদন কম হয়ে যায়। গৌণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতার সাথে যুক্ত রোগের মধ্যে রয়েছে সিলিয়াক রোগ, কোলন সংক্রান্ত রোগ, অন্ত্রের সংক্রমণ এবং ব্যাকটেরিয়া অতিরিক্ত বৃদ্ধি ইত্যাদি। এইসব ব্যাধির চিকিৎসা শরীরে ল্যাকটেজ স্তরের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে এবং রোগলক্ষণগুলি পুনরুদ্ধার করতে পারে, যদিও তা সময়সাপেক্ষ।
জন্মগত বা বিকাশগত কারণে ঘটা ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতা
বিরল কিছু ক্ষেত্রে ল্যাকটেজের অভাবের কারণে কিছু শিশু ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতা নিয়ে জন্মায়। এই রোগটি অটোসোমাল রিসেসিভ নামে পরিচিত, উত্তরাধিকারের একটি নমুনায় এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়, অর্থাৎ মা- বাবা উভয়েই একই জিন বৈকল্পিক শিশুর কাছে প্রেরণ করে থাকে যার ফলে শিশুটি আক্রান্ত হয়। অপর্যাপ্ত ল্যাকটেজ স্তরের কারণে সময়ের পূর্বে জন্ম নেওয়া শিশুদেরও ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকতে পারে।
জটিলতাসমূহ
দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্যে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন A, B12, D এবং প্রোটিন থাকে। জিঙ্ক এবং ম্যাগনেসিয়ামের শোষণ ল্যাকটোজ দ্বারা প্রভাবিত হয়। আপনি যদি ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণু হয়ে থাকেন তাহলে শরীরে এই খনিজগুলির পরিমাণ কমে যায় যা অস্টিওপেনিয়া, অস্টিওপোরোসিস এবং অপুষ্টির কারণ হতে পারে।
ঝুঁকির কারণ
চিকিৎসা
এই সমস্যার উপযুক্ত চিকিৎসা শরীরের অবস্থার উন্নতি করবে এবং আপনাকে ল্যাকটোজ হজম করতে সাহায্য করবে। চিকিৎসা প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করার জন্য কয়েক মাস প্রয়োজন। যদি এরপরেও ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতা কমে না থাকে, তাহলে কম-ল্যাকটোজযুক্ত ডায়েট অনুসরণ করলে উপকার হবে।
আমদের খাওয়া দুগ্ধজাত দ্রব্যের সংখ্যা কমানো এবং সয়া বীজ থেকে প্রাপ্ত দুধ, পনির এবং বাদামের দুধ জাতীয় ল্যাকটোজ-মুক্ত পণ্য ব্যবহার করে আমাদের শরীরে ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতার সঙ্গে আমরা লড়তে পারি।
উৎসেচক পরিপূরকগুলি ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতার রোগীদের জন্য কার্যকর বলা হয়। যাইহোক, এর প্রভাব ব্যক্তিবিশেষে পরিবর্তিত হয়। উচ্চ পরিমাণে ল্যাকটোজ গ্রহণ করা হলে উৎসেচক পরিপূরক কাজ করে না।
প্রিবায়োটিক এবং প্রোবায়োটিক খাদ্য দ্বারা ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতার উপসর্গগুলি কমানো যায় এবং কিছু রোগীর জন্য এটি কার্যকর।
সতর্কতা
পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা সম্ভব কোন খাবার সমস্যা সৃষ্টি করছে। যদি ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতা খুব বেশি হয়, তবে আপনাকে দুগ্ধজাত খাদ্য এড়িয়ে চলতে হবে।
দুধ ব্যতীত প্রোটিনসমৃদ্ধ, ভিটামিন ডি এবং খনিজসমৃদ্ধ পণ্য খেতে পারেন। ব্রকলি, সিরিয়াল, ফলের রা, মাছ, সয়া বীজের দুধ, বাদাম দুধ ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। এই বিকল্পগুলি আপনার খাদ্যতালিকায় বেশি করে যুক্ত করা উচিত। প্রচুর ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবারের পাশাপাশি যেন ক্যালসিয়াম প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম করে গ্রহণ করতে পারেন সেটি সুনিশ্চিত করুন।
প্রোবায়োটিক আপনাকে পাকস্থলীতে উপস্থিত ল্যাকটোজকে হজম করতে এবং সাধারণ শর্করায় রূপান্তরিত হতে সাহায্য করবে।
খাদ্যতালিকাগত নিয়ম
ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণু ব্যক্তিদের জন্য খাদ্যতালিকাগত নিয়ম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নসমূহ:
আপনি কি হঠাৎ ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণু অনুভব করতে পারেন?
না, আমরা এভাবে হঠাৎ ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণু হতে পারি না। ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতা যার অর্থ দুগ্ধজাত দ্রব্যে উপস্থিত শর্করা হজমে অক্ষমতা, তা একটি ধীর পক্রিয়া। অনেক কিছু ল্যাকটোজের প্রতি অসহিষ্ণুতা নিয়ন্ত্রণ করে।
আপনার ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু হওয়ার কারণ কী?
অনেক কারণের মধ্যে জাতিগত, বয়স, সময়ের পূর্বে জন্মগরহণ এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের রোগের কারণে ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা দেখা দেয়।
Our expert general medicine specialists verify the clinical accuracy of the content to deliver the most trusted source of information makine management of health an empowering experience