নিম্ন রক্তচাপের লক্ষণ ও উপসর্গ

ভূমিকা

সহজভাবে বললে, রক্তচাপ হল সেই চাপ যার জন্য আপনার রক্তনালীতে রক্ত ​​প্রবাহিত হয়। যখন রক্ত ​​প্রবাহের এই চাপ একটি নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি কমে যায়, তখন বলা হয় আপনার নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে।

রক্তচাপ কী এবং কীভাবে পরিমাপ করা হয়?

রক্তের প্রবাহ(চাপ) আপনার ধমনীর (যে শিরাগুলি হৃৎপিণ্ড থেকে অঙ্গগুলিতে রক্ত ​​​​বহন করে) প্রাচীরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় রক্তচাপ হিসাবে পরিচিত। সাধারণত, সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক এই দুটি ভালভ দ্বারা রক্তচাপ পরিমাপ করা হয়। এই মানগুলি পারদ (mmHg) এর মিলিমিটারে রক্তচাপ নথিবদ্ধ করে। সিস্টোলিক ভালভগুলি উপরে এবং নীচে ডায়াস্টোলিক তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

একটি সুস্থ রক্তচাপ, বেশিরভাগ ব্যক্তির মধ্যে, 120/80 (সিস্টোলিক/ডায়াস্টোলিক) mmHg এর কম এবং 90/60 mmHg এর বেশি বলে মনে করা হয়। এই সীমার উপরে যে কোনও রক্তচাপ উচ্চ রক্তচাপ হিসাবে বিবেচিত হয় এবং এই সীমার নীচে নিম্ন রক্তচাপ হিসেবে বিবেচিত হয়।

নিম্ন রক্তচাপের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলি কী কী?

মানুষের মধ্যে বিভিন্ন অবস্থার কারণে নিম্ন রক্তচাপ হতে পারে। তবে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় যে কারণগুলো সেগুলো হল :

• অবসাদ- অবসাদ হল ক্লান্তি এবং শক্তির সামগ্রিক অভাবের ফলে সৃষ্টি হওয়া একটি সাধারণ অনুভূতি।

• হালকা মাথাব্যথা- এটি এমন অনুভূতি যাতে আপনি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন এবং এই অনুভূতিতে আপনি আপনার মাথায় পর্যাপ্ত রক্তের ​​অভাব ও মাথা হালকা হয়ে যাওয়া অনুভব করতে পারেন। এটি নিম্ন রক্তচাপের স্পষ্ট লক্ষণগুলির মধ্যে একটি। হালকা মাথা ব্যথার সাথে ঝাপসা দৃষ্টি এবং মাথা ঘোরা যা মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। অজ্ঞান হওয়া রোধ করতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

•  মাথা ঘোরা- মাথা ঘোরার বিষয়টা প্রায়ই হালকা মাথাব্যথার সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। ভারসাম্য হারানোর কারণে আপনি এর কারণে অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন।

•  বমি বমি ভাব- বমি বমি ভাব হল পেটের মধ্যে হওয়া অস্বস্তি ভাব এবং বমি করার একটা অনুভূতি হওয়া। বমি বমি ভাব হলে সাধারণত পেটে থাকা সবকিছু বেরিয়ে গেলে তবেই অস্বস্তি লাঘব হয়। একবার বমিভাব কমে গেলে, বেশি বেশি জল খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে আবার আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে হবে, জলশূন্যতা রোধ করতে হবে।

• আঠাযুক্ত চামড়া- এর অর্থ ত্বক ভেজা কিংবা ঘামে ভেজা ত্বক।

• অজ্ঞান হয়ে যাওয়া

• ঝাপসা দৃষ্টি

আমার কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?

 নিম্ন রক্তচাপের উপসর্গগুলি যেমন মাথা ঘোরা বা শুধুই নিম্ন রক্তচাপ হওয়া  কিংবা হঠাৎ করে এটা উপলব্ধি করলে তেমন ভয়ের কোনো প্রকার আশঙ্কা থাকে না। তবে, যদি আপনার নিম্ন রক্তচাপের উপসর্গ থাকে, তবে সেগুলি নথিবদ্ধ করা উচিত এবং একজন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞের কাছে রিপোর্ট করা উচিত।

নিম্ন রক্তচাপের কারণ কী?

নিম্ন রক্তচাপের কারণগুলি নিম্নরূপ:

• অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন। পোস্টুরাল হাইপোটেনশন বা অর্থোস্ট্যাটিক হল নিম্ন রক্তচাপের একটি রূপ যা বসা বা শুয়ে থাকা অবস্থান থেকে দাঁড়ানোর সময় ঘটে।

• গর্ভাবস্থা। গর্ভাবস্থা সংবহনতন্ত্রের দ্রুত প্রসারণ ঘটায় যা রক্তচাপ হ্রাসের লক্ষণ। প্রসবের পরে স্বাভাবিক রক্তচাপের মাত্রার পুনরুদ্ধার হয়ে যায়।

• হৃদপিণ্ডজনিত সমস্যা। ব্র্যাডিকার্ডিয়া (হৃদপিণ্ডের স্পন্দনের কম হার) যা হার্টের ভালভের সমস্যা, হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ফেইলিওরের কারণে হয়। এটি নিম্ন রক্তচাপের কারণ হতে পারে।

• অতিরিক্ত জলশূন্যতা। জলশূন্যতা, শব্দটিই এর অর্থ নির্দেশ করে, এটি এমন এক অবস্থা যখন আপনার শরীর যে পরিমাণ জল গ্রহণ করে তার চেয়ে বেশি জল হারায়। এর ফলে দুর্বলতা, ক্লান্তি এবং মাথা ঘোরা হতে পারে।

• নানা ধরনের ওষুধ। বিভিন্ন ওষুধ নিম্ন রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে, বিশেষ করে সেইসব রোগীদের যারা অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ ওষুধ সেবন করছেন।

•  অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। আঘাত বা অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের কারণে যখন আপনার অত্যধিক রক্তক্ষরণ হয়, তখন রক্তের হারানো পরিমাণ রক্তচাপের তীব্রতার হ্রাস ঘটায়।

• ভারসাম্যহীন খাদ্য। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন B-12, ফোলেট এবং আয়রনের অনুপস্থিতি বা ঘাটতি রক্তাল্পতার (লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা হ্রাস) কারণ হতে পারে, যা নিম্ন রক্তচাপের দিকে পরিচালিত করে।

কীভাবে এই উপসর্গ প্রতিরোধ করা যেতে পারে?

যদি নিম্ন রক্তচাপ দেখা যায়, তবে মাথা ঘোরার মতো লক্ষণগুলি প্রতিরোধ করার জন্য কিছু সহজ উপায়ের পরামর্শ দেওয়া হয়।

• জল খাওয়ার পরিমাণ বাড়ান

• অ্যালকোহল সেবন হ্রাস করুন বা সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলুন

• ক্যাফেইন সীমিত করুন বা এড়িয়ে চলুন

যদি আপনি মাথা ঘোরা বা মাথার হালকা হয়ে যাওয়া অনুভব করেন:

•  কয়েক মিনিট শুয়ে পড়ুন

• উঠে বসুন এবং আপনার মাথা দুই হাঁটুর মাঝে রাখুন

এটি আপনার রক্তচাপকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে এবং আপনার লক্ষণগুলি দূর করতে সাহায্য করবে।

উপসংহার

হাইপোটেনশন, বা নিম্ন রক্তচাপ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলে সহজেই এর লক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং তা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এর উপসর্গগুলি কিসের জন্য উদ্দীপ্ত হচ্ছে সে সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং সেগুলি এড়িয়ে চলুন। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরকে আর্দ্র রাখা এবং ব্যায়াম সবসময় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

কোন অস্বস্তি বা উপসর্গকে কখনই অবহেলা না করা উচিত এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার ডাক্তারের কাছে এই বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে ভালো।

সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্নাবলী 

1. রক্তে নিম্ন মাত্রার শর্করা এবং নিম্ন রক্তচাপ কি একই?

এই দুটি একই নয়, তবে রক্তে কম শর্করার মাত্রা নিম্ন রক্তচাপ ঘটাতে পারে।

2. জীবনযাত্রার কোন কোন পরিবর্তন নিম্ন রক্তচাপকে ব্যাহত করবে? 

মূল তিনটি প্রধান খাবারের পরিবর্তে আপনার খাবারকে একাধিক ছোট ছোট আকারে ভেঙ্গে নিন। কম কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খান। 

3. নিম্ন রক্তচাপের ঝুঁকির কারণগুলি কী কী?

বার্ধক্য, ওষুধ এবং পারকিনসন্স এবং অন্যান্য হৃদযন্ত্রের কিছু রোগ লোকেদের নিম্ন রক্তচাপের জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।