Verified By Apollo General Physician April 10, 2024
9447রাতে অতিরিক্ত ঘাম হওয়াকে রাতের ঘাম বলা হয়, যা আপনার জামাকাপড় এবং বিছানার চাদর পর্যন্ত ভিজিয়ে দিতে পারে। তবে, এই ঘাম হওয়াটা অতিরিক্ত উত্তপ্ত পরিবেশের সাথে ঠিক সম্পর্কিত নয়। অনেক লোক রাতে এই ঘাম হবার অভিযোগ করে থাকে, কিন্তু সাধারণত এর বিভিন্ন কারণ থাকে। রাতের ঘামের সাথে খুব গুরুতর কিছু জড়িত না হলেও তবে এটি যদি নিয়মিত বযাপার হয়ে যায় তবে এটি একটি সম্ভাব্য শারীরিক অসুস্থতার ইঙ্গিত দিতে পারে। মেনোপজ বা হরমোন সম্পর্কিত সমস্যাগুলির সময় মহিলাদের মধ্যে এই অবস্থাটি আরও পরিচিত বলে জানা যায়।
রাতের ঘাম কী?
ঘাম হল শরীরের তাপমাত্রা কমানোর একটি প্রাকৃতিক উপায়। যদি আপনি একটি গরম পরিবেশের মধ্যে থাকেন, ঘর্মগ্রন্থিগুলি জল ছেড়ে দেয়, যা বাষ্পীভূত হয় এবং তাপের পরিমাণ হ্রাস করে, এইভাবে শরীরে তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। এটি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া যা দিনের সব সময়ে ঘটতে পারে। তবে, কখনও কখনও এটি একদম উপযুক্ত শীতল পরিবেশেও ঘটতে পারে। একজন ডাক্তার এই ঘটনাকে ‘স্লিপ হাইপারহাইড্রোসিস’ হিসেবে উল্লেখ করতে পারেন।
এর সাথে যুক্ত লক্ষণ
রাতের ঘামের কারণের উপর নির্ভর করে, আপনি বিভিন্ন সম্পর্কিত উপসর্গগুলি অনুভব করতে পারেন। নীচে এইরূপ কয়েকটি দেওয়া হল:
রাতে ঘাম হওয়ার কারণ
বিভিন্ন কারণে রাতে ঘাম হতে পারে। তাদের মধ্যে কয়েকটি নীচে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে:
1. মেনোপজ: মহিলারা তাদের মেনোপজের সময় এটি অনুভব করতে পারে।
2. ইডিওপ্যাথিক হাইপারহাইড্রোসিস: এমন একটি অবস্থা যেখানে শরীর দীর্ঘস্থায়ীভাবে কোনো শনাক্তযোগ্য চিকিৎসা সমস্যা ছাড়াই ঘামতে শুরু করে।
3. ক্যান্সার: ক্যান্সারের সাথে লড়াই করা ব্যক্তিদের প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে একটি হল রাতের ঘাম। বেশিরভাগ লসিকা গ্রন্থিই অতিরিক্ত ঘামের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উপরন্তু, কেমোথেরাপি নিচ্ছেন এমন লোকেদেরও রাতের ঘাম হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে।
4. হৃৎপিণ্ডঘটিত সমস্যা: হৃৎপিণ্ডঘটিত জটিলতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাঝে মাঝেই বেশি ঘাম হয়।
5. ওষুধ: রাতের ঘাম বা ঘামা, সাধারণভাবে, ওষুধের সাথে সম্পর্কিত, যেমন অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বা ব্যথানাশক ওষুধ।
6. রক্তে কম মাত্রায় শর্করা: এই অবস্থাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়াও বলা হয়। রক্তে কম মাত্রায় শর্করা থাকার কারণেও একজন ব্যক্তি বেশি ঘামতে পারে।
7. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: হাইপারথাইরয়েডিজম সহ হরমোনের ভারসাম্যহীনতায় ভুগছেন এমন লোকদের সাধারণত অতিরিক্ত লালচে বর্ণ নিতে দেখা যায় বা ঘামতে দেখা যায়।
8. স্নায়বিক ব্যাধি: যদিও এটা খুবই বিরল, তাও, রাতের ঘাম স্নায়বিক অবস্থার সাথে সম্পর্কিত; উদাহরণস্বরূপ, অটোনমিক নিউরোপ্যাথি এর কারণে রাতের ঘাম হতে পারে।
9. মানসিক উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তা: মানসিক উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তা সাথে মোকাবিলা করা লোকেদের মধ্যে ঘামের মতো শারীরিক লক্ষণগুলি দেখা যায়।
10. স্লিপ অ্যাপনিয়া: আপনার শ্বাসনালীতে বাধার ফলে বারবার শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যার ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে, এটা স্লিপ অ্যাপনিয়া নামে পরিচিত।
11. গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ: বুকজ্বালা এর সাথে অম্বল এবং অম্লতার কারণে কখনও কখনও রাতে ঘাম হতে পারে।
12. মদ্যপানে আসক্তি: যারা মদ্যপানীয় থেকে নির্ভরতা কাটিয়ে উঠছে তারা এটির প্রত্যাহারের লক্ষণ হিসাবে রাতের ঘাম হওয়ার মতো ঘটনাগুলি অনুভব করতে পারে।
রাতের ঘাম, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। আর লিঙ্গভেদে রাতের ঘামের কারণগুলিও আলাদা হয়। মহিলাদের মধ্যে রাতের ঘাম মেনোপজ, গর্ভাবস্থা বা প্রসবোত্তর ঘামের মতো হরমোনজনিত পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত।
কখন একজন ডাক্তারকে দেখাবেন
রাতের ঘাম সবসময় ঘুমের গুণমানকে প্রভাবিত করে না। তবে, যদি এটি আপনার ঘুমকে প্রভাবিত করে বা আপনার উপর উল্লিখিত লক্ষণগুলি থাকে তবে আপনাকে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
রাতের ঘাম সাধারণত যে কোনো অন্তর্নিহিত চিকিৎসা অবস্থার সাথে সম্পর্কিত থাকে, যার চিকিৎসা হওয়া প্রয়োজন। যদি এটির সাথে জ্বর, সর্দি এবং কাশি বা অব্যক্ত ওজন হ্রাসের মতো ঘটনা হয়ে থাকে তবে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে অবিলম্বে যোগাযোগ করা উচিত। রাতের ঘামের অন্তর্নিহিত কারণ প্রকাশ হয়ে গেলে তারা একটি চিকিৎসা পরিকল্পনার কথা ভাববে।
রাতের ঘামকে আপনি কীভাবে প্রতিরোধ করতে পারবেন?
রাতের ঘামের বিষয়ে যেগুলি কোনও চিকিৎসা অবস্থার সাথে সম্পর্কিত নয় সেগুলি কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলেই প্রতিরোধ করা যেতে পারে, যেমন:
রাতের ঘামের জন্য চিকিৎসা
রাতের ঘামের জন্য চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রাথমিকভাবে কারণের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়, উদাহরণস্বরূপ:
আমরা যে ক্লান্তিকর এবং চাপযুক্ত জীবন যাপন করি তার কথা বিবেচনা করে, রাতের ঘাম সাধারণ ঘটনা। যদি এটি কোন কারণ ছাড়াও ঘটে যায়, তবুও তারা ঘুমের গুণমানকে ব্যাহত করে। আপনি যদি নিয়মিত রাতের ঘামের সম্মুখীন হন তবে এটি একটি অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে যার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)
রাতের ঘাম কি অপ্রীতিকর স্বপ্নের সাথে সম্পর্কিত?
উদ্বেগ এবং মানসিক চাপ আপনার ঘাম সৃষ্টি করতে পারে। বারবার দেখা খারাপ স্বপ্ন আপনার ঘুমের চক্রকে প্রভাবিত করতে পারে, এইভাবে তা মানসিক চাপ বাড়ায় এবং আপনার আরও বেশি ঘাম হতে পারে। ঘুমানোর আগে ঠান্ডা জলে স্নান করুন এবং খারাপ স্বপ্ন এড়াতে ঘুমের ধ্যান এর চেষ্টা করুন।
ক্যান্সারের কারণে কি আপনার বেশি ঘাম হয়?
কখনও কখনও, ক্যান্সার এর জন্যও আপনার অত্যাধিক ঘাম হতে পারে। যদিও সাধারনত, কেমোথেরাপি এবং উচ্চ মাত্রার ক্যানসার বিরোধী ওষুধ আপনাকে আরও ঘামিয়ে তুলতে পারে। যদি এটি আপনাকে অনেক বেশি প্রভাবিত করে থাকে তবে ওষুধের মাত্রা কমাতে একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কি বেশি ঘামেন?
হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মাঝে মাঝে বেশি ঘামেন। কারণ তাদের হৃৎপিণ্ডকে সারা শরীরে রক্ত পাম্প করার জন্য অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। হৃদযন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির যদি প্রচুর ঘাম হয় এবং তার সাথে বুকে ব্যথা হয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসা ব্যবস্থার সাহায্য নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এক্ষেত্রে তাদের খুব সম্ভাবনা থাকে হার্ট অ্যাটাক এ আক্রান্ত হবার।
Our expert general medicine specialists verify the clinical accuracy of the content to deliver the most trusted source of information makine management of health an empowering experience