বাড়ি Health A-Z ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিস কি একটি অটোইমিউন রোগ?

      ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিস কি একটি অটোইমিউন রোগ?

      Cardiology Image 1 Verified By Apollo General Physician April 11, 2024

      910
      ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিস কি একটি অটোইমিউন রোগ?

      ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিসের সংক্ষিপ্তসার

      গ্র্যানুলোমেটোসিস পলিএঞ্জাইটিসের একটি বিরল রোগ। এর ফলে আপনার সাইনাস, নাক, শ্বাসযন্ত্র, গলা এবং বৃক্কের রক্তনালীগুলি ফুলে যায়। আগে একে ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিস বলা হত। প্রভাবিত কলাগুলি ফুলে যায় যাকে বলে গ্র্যানুলোমাস তাই এইরূপ নামকরণ করা হয়ে থাকে। ফলে ঐ অঙ্গগুলির কর্মদক্ষতায় প্রভাব পড়ে।

      ১৮৯৭ সালে পিটার ম্যাকব্রিড তাঁর একটি লেখায় সর্বপ্রথম ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিসের উল্লেখ করেন। পরবর্তীকালে হেন্জ ক্লিংগার নামে এক জার্মান ডাক্তারি ছাত্র তাতে আরও কিছু শারীরবৃত্তীয় তথ্য যোগ করেন। ১৯৪৬ সালে ফ্রায়েডরিচ ওয়েগেনার নামে এক জার্মান প্যাথোলজিস্ট এই রোগের ব্যাপারে সমস্ত ক্লিনিক্যাল তথ্য উপস্থাপন করেন। তাই তাঁর নামানুসারে এই রোগের নামকরণ হয় ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিস।

      ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিস কী?

      ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিসের কারণে রক্তনালীতে সিস্টেমিক প্রদাহের সৃষ্টি হয়। এটি একটি খুবই বিরল রোগ, যাতে খুবই দ্রুত সারা শরীরের রক্তনালিগুলি ফুলে যায়। সাধারণত সবচেয়ে বেশি প্রদাহ হয় এমন অঙ্গগুলি হল সাইনাস নাক, শ্বাসযন্ত্র, গলা এবং বৃক্ক।

      ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিসের উপসর্গ কী?

      আপনি হয়তো হঠাৎ করেই বা সময়ের সাথে সাথে ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিসের উপসর্গ লক্ষ্য করবেন। তবে এই রোগের উপসর্গগুলি গুরুতর অবস্থা বিশেষে নির্ভর করে। ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিস প্রথম শরীরের কোন অঙ্গের উপর প্রভাব বিস্তার করছে তার উপরেও এটি নির্ভর করে। এই রোগের কয়েকটি উপসর্গ হলো :

      • খিদে কমে যাওয়ায় ওজন কমে যাওয়া
      • ক্রমাগত নাক দিয়ে জল পড়া (রাইনোরিয়া), নাক দিয়ে রক্তপাত এবং নাক দিয়ে পুঁজ জাতীয় মিউকাস পড়া
      • অনবরত কাশি (কখনো রক্ত পড়া)
      •  ক্লান্তিভাব
      • শ্বাসকষ্ট
      • জ্বর
      • গাঁটে ব্যথা
      • প্রস্রাবের সাথে রক্ত বের হওয়া
      • দেখতে অসুবিধা হওয়া, কানে প্রদাহ এবং চামড়ায় কালশিটে পড়া।

      কখন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিসের ব্যাপারে?

      এই রোগের প্রথম উপসর্গগুলো সাধারণত ফ্লু এর মতোই। তাই এই দুটি রোগকে আলাদা করে চিহ্নিত করা খুবই কঠিন। সাধারণ ফ্লু এর ওষুধ খাওয়ার পরেও যদি উপসর্গগুলি থেকে যায়, বিশেষ করে নাক দিয়ে রক্তপাত হতেই থাকে তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। যেহেতু ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিস খুব কম সময়েই গুরুতর অবস্থা ধারণ করতে পারে, তাই  কোনোরকম অভ্যন্তরীণ ব্যথা বা নাক, শ্বাসযন্ত্র, গলা ও বৃক্কতে অস্বস্তি হলেই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। প্রথমেই চিকিৎসা শুরু হয়ে গেলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। আপনি সরাসরি অ্যাপোলো হসপিটালে আসতে পারেন বা  সাক্ষাৎকারের জন্য অনুরোধ করতে পারেন।

      ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিসের কারণ কী?

      এই রোগের কারণ সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি। এটি ক্যান্সারের মতো নয় এবং একটি বংশগত রোগও নয়। এই রোগটি ছোঁয়াচে নয়। হঠাৎ করেই এটির সূত্রপাত হতে পারে, আপনি কিছু উপসর্গ অনুভব করতে শুরু করেন, যেটা আবার হঠাৎই হতে পারে কিংবা কখনো কখনো কয়েক মাস পরেও দেখা যায়। ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিসের কারণে রক্তনালীর প্রদাহ হয়, এতে রক্ত ও অক্সিজেন অন্যান্য অঙ্গ পৌঁছতে সমস্যা হয়।

      কীভাবে ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিসের চিকিৎসা করা হয়?

      ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিস এমন একটি রোগ যার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। এর স্বল্প-মেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী উভয় ধরনের চিকিৎসা হতে পারে, অর্থাৎ লক্ষণ ও উপসর্গ হ্রাস করা। যদি উপসর্গগুলো ধীরে ধীরে কমতে থাকে তাহলে এর চিকিৎসা করতে স্বাভাবিকের থেকে বেশি সময় লাগবে। যদি উপসর্গগুলি দ্রুত কমতে থাকে তাহলে আপনি কয়েক মাসের মধ্যেই স্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু করতে পারবেন। তবে আপনাকে নিয়মিত ডাক্তারের কাছে শারীরিক পরীক্ষার জন্য যেতে হবে যাতে এটির পুনরাবৃত্তি না ঘটে। আপনার অবস্থা গুরুত্ব বুঝে এই রোগের প্রাথমিক চিকিৎসায়  প্লাজমা বদল এবং ইমিউনোসপ্রেসিভ ড্রাগ এরমতো ওষুধ দেওয়া হয়।

      ওষুধ:

      ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিস হল একটি অটোইমিউন রোগ। তাই এই রোগের চিকিৎসায় যে ওষুধ ব্যবহার করা হয় তা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কিছুটা কমিয়ে দেয়। সংক্রমণ এবং ওজন বেড়ে যাওয়ার মত এই ওষুধগুলোর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। তাই আপনার ডাক্তার হয়তো আপনাকে কিছু অন্য ওষুধ দেবে যাতে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোকে কমানো যায়। এই রকম কয়েকটি খুব পরিচিত অনাক্রম্যতা হ্রাসকারী ওষুধ হল:

      • কর্টিকোস্টেরয়েড
      • সাইক্লোফসফেমিড
      • অ্যাজাথিওপ্রাইন
      • মাইকোফেনোলেট
      • মেথোট্রেক্সেট
      • রিটুক্সিম্যাব

       প্লাজমা বদল:

      প্লাজমা বদল বা প্লাজমাফেরেসিস  রক্ত থেকে সংক্রমিত প্লাজমা সরিয়ে দেয়। তাজা প্লাজমা বা অ্যালবুমিন (লিভারের দ্বারা তৈরি একটি প্রোটিন), যা শরীরে নতুন প্লাজমা তৈরি করতে সাহায্য করে সেটা দেওয়া হয়। যাদের পলিএঞ্জাইটিসের সাথে গুরুতর গ্রানুলোমাটোসিস আছে তাদের ক্ষেত্রে প্লাজমাফেরেসিস বৃক্ক পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করতে পারে।

      ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিসের কী কী জটিলতা আছে?

      যদি এই রোগটিকে গুরুত্ব দেওয়া না হয় এবং চিকিৎসা করতে দেরি হয় তাহলে অনেক ধরনের গুরুতর জটিলতা দেখা দেয়। এই রকম কয়েকটি জটিলতা হলো:

      • ত্বকে দাগ হয়ে যাওয়া
      • দুর্বল তরুণাস্থি যার ফলে নাকের উপরের অংশ ছোট হয়ে যায়
      • শোনার সমস্যা
      • শিরাতে রক্ত জমে যাওয়া
      • বৃক্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া
      • ফুসফুস বিকল হয়ে যাওয়া

      এই রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি থেকেই এর জটিলতা দেখা দেয়। যেহেতু ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিস  একটি অটোইমিউন রোগ তাই এর ঔষধই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে এই সমস্ত জটিলতা দেখা দেয়।

       উপসংহার:

      ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিসের অনেক জটিলতা থাকলেও এটি একটি চিকিৎসাযোগ্য রোগ।  তাই উপরিক্ত কোন প্রকার উপসর্গ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। আপনি সব থেকে ভালো চিকিৎসা ও সাহায্যের জন্য অ্যাপোলো হসপিটালে সরাসরি  আসতে পারেন। আপনার বা আপনার পরিবারের কোনো সদস্যের যদি এই রোগ হয় তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে এটা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য। এটি আপনাকে তাড়াতাড়ি রোগ নির্ণয় করতে ও তা থেকে সুস্থ হতে সাহায্য করবে।

      প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)

      1. ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিসের ঝুঁকি কী কী?

      ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিসের বিশেষ কোনো ঝুঁকি নেই। বয়স ও লিঙ্গ নির্বিশেষে যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগটি বংশগত কিনা সেটা নিয়ে এখনো কোন ক্লিনিক্যাল প্রমাণ নেই। 

      2.  কোন ডাক্তার ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিসের চিকিৎসা করেন?

      ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিসের চিকিৎসা নির্ভর করে শরীরের কোন অঙ্গে এটি হয়েছে তার ওপর। কোন ডাক্তার এর চিকিৎসা করবেন সেটিও একইভাবে নির্ভরশীল। যেমন, বৃক্কের প্রদাহের ক্ষেত্রে নেফ্রলজিস্ট এবং শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহের ক্ষেত্রে পালমোনোলজিস্ট চিকিৎসা করবেন। আর যদি একসাথে শরীরের অনেকগুলি অঙ্গ এই রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলে সেই সেই ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন ডাক্তাররা একসাথে এর চিকিৎসা করবেন।

      3. ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিসের  চিকিৎসা করতে কত সময় লাগে?

       সাধারণত ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিসের  চিকিৎসা করতে 3-4  মাস সময় লাগে।  যদিও এটি নির্ভর করে  কোন পদ্ধতিতে চিকিৎসা হচ্ছে অর্থাৎ  স্বল্প-মেয়াদী না দীর্ঘমেয়াদী তার ওপর। স্বল্প-মেয়াদী চিকিৎসাতে সময় কম লাগে।

      4. ওয়েগেনার্স গ্র্যানুলোমেটোসিস চিহ্নিত করার জন্য কী কী সাধারণ পরীক্ষা করা হয়?

      ওয়েজেনারের গ্রানুলোমাটোসিস নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত সাধারণ পরীক্ষাগুলির মধ্যে রয়েছে সংকীর্ণ রক্তনালী এবং প্রভাবিত অঙ্গগুলি নির্ধারণের জন্য এক্স-রে, সিটি স্ক্যান বা এমআরআই-এর মতো চিত্রভিত্তিক পরীক্ষা। রক্ত পরীক্ষা, প্রদাহের লক্ষণ সনাক্ত করতেও কার্যকর। উদাহরণস্বরূপ, সি-প্রতিক্রিয়াশীল প্রোটিনের উচ্চ উপস্থিতি প্রদাহের উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে। বায়োপসি দিয়ে এখন রোগ নির্ণয় করার উন্নত পদ্ধতি হয়েছে। এতে আক্রান্ত কলার একটি নমুনা নেওয়া হয় এবং ব্যাধি নিশ্চিত করার জন্য সেটির পরীক্ষা করা হয়।

      https://www.askapollo.com/physical-appointment/general-physician

      Our expert general medicine specialists verify the clinical accuracy of the content to deliver the most trusted source of information makine management of health an empowering experience

      Cardiology Image 1

      Related Articles

      More Articles

      Most Popular Articles

      More Articles
      © Copyright 2024. Apollo Hospitals Group. All Rights Reserved.
      Book ProHealth Book Appointment
      Request A Call Back X