হাইপারহাইড্রোসিস কি একটি অন্তর্নিহিত রোগের কারণে হয় এবং আপনার কী সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত

হাইপারহাইড্রোসিস হলো একটি অবস্থা যা ব্যায়াম অথবা গরমের সাথে জড়িত না থাকা অত্যধিক ঘামের কারণ।

গবেষণা বলে যে, প্রায় 4.8% আমেরিকানদের মধ্যে এই রোগ রয়েছে। যাই হোক, এই পরিসংখ্যানটি হয়তো সঠিক গণনা নাও হতে পারে। এটি সাধারণত কম রিপোর্ট করা হয়। হাইপারহাইড্রোসিস থাকা মানুষের চিকিৎসা সহায়তা না নেওয়ার প্রধান কারণ হলো তারা বোঝে না যে তাদের এই স্বাস্থ্যের অবস্থাটি নিরাময় যোগ্য।

হাইপারহাইড্রোসিস সম্বন্ধে আরও

আপনার শরীর নিজেকে ঠান্ডা করার জন্য ঘামে। হাইপারহাইড্রোসিসে অত্যধিক ঘাম হয়, যা ঘামে ভেজা শরীর, ঘর্মাক্ত হাতের তালু এবং ঘামে ভেজা জামাকাপড়ের দিকে পরিচালিত করে। প্রাথমিকভাবে এটি আপনার বগল এবং মুখের সাথে পা-এর সাথে জড়িত থাকে। এই অবস্থাটি দৈনন্দিন কাজকর্মে বাধা দেয় এবং সামাজিক উদ্বেগ এবং বিব্রত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

হাইপারহাইড্রোসিস কন্ডিশন দু ধরনের হয় মুখ্য এবং গৌণ। যদিও পূর্বের কারণগুলি এখনও জানা যায়নি এবং প্রায়শই জিনকে আরোপিত করা হয়, পরবর্তী অন্তর্নিহিত কারণগুলির ক্ষেত্রে থাইরয়েড, মধুমেহ এবং হার্ট অ্যাটাককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

হাইপারহাইড্রোসিসের লক্ষণগুলি কী কী?

তীব্র পরিশ্রম করার সময়কাল, সূর্যের নিচে খেলা অথবা চাপ এবং উদ্বেগের কারণে ঘাম হতে পারে। যদিও, হাইপারহাইড্রোসিসে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া হল আলাদা। হাইপারহাইড্রোসিসের কিছু গুরুতর লক্ষণ গুলি যার দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন সেগুলি হল-

• যদি ঘাম আপনার প্রতিদিনের সাধারণ কাজকর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
• যদি অতিরিক্ত ঘামের কারণে আবেগপূর্ণ কষ্ট এবং সামাজিক প্রত্যাহার হয়।
• যদি একজন ব্যক্তির সাধারণ ঘামের তুলনায় অতিরিক্ত ঘাম হয়।
• যদি আপনি কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই রাতে ঘর্মিত হন।

অন্তর্নিহিত কারণের ফলে আপনার হাইপারহাইড্রোসিস হতে পারে যা আপনার সারা শরীরে ঘাম হওয়ার কারণ হতে পারে। উপরে উল্লেখিত কোনো উপসর্গ দেখা গেলে, আপনার ডাক্তারের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করুন।

হাইপারহাইড্রোসিসের কারণগুলি কী কী?

মানুষের শরীরে ঘাম হলো একটি সাধারণ জৈবিক প্রক্রিয়া যা আপনাকে ঠান্ডা করার জন্য ঘটে। যখনই আপনার শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে, আপনার স্নায়ুতন্ত্র ঘর্মগ্রন্থিগুলিকে সক্রিয় করে। উত্তেজনার সময়তেও হাতের তালুতে ঘাম দেখা যায়। হাইপারহাইড্রোসিসের দুটি ধরন আলাদা অন্তর্নিহিত ব্যাধির জন্য ঘটে। সেগুলি হল-

1. মুখ্য ফোকাল হাইপারহাইড্রোসিস 

মুখ্য ফোকাল হাইপারহাইড্রোসিস কোনো উল্লেখযোগ্য অন্তর্নিহিত রোগের কারণে হয় না।এই অবস্থার জন্য হয়তো একটি বংশগত উপাদান দায়ী থাকে। এই ধরনের হাইপারহাইড্রোসিস, আপনার ঘর্মগ্রন্থির স্নায়ুর অত্যধিক সক্রিয়তার কারণে ঘটে। কোনো শারীরিক কার্যক্রম অথবা শরীরের বৃদ্ধি পাওয়া তাপমাত্রার কারণে এটি হয় না। এই অবস্থাটি চাপ এবং স্নায়বিক দুর্বলতার কারণে আরো খারাপ হতে পারে। এটি হাতের তালু, পায়ের পাতা এবং কিছু ক্ষেত্রে মুখমণ্ডলেও ঘাম হওয়ার দিকে পরিচালিত করে।

2. গৌণ হাইপারহাইড্রোসিস

কোনো অন্তর্নিহিত চিকিৎসার অবস্থা থাকলে গৌণ হাইপারহাইড্রোসিস ঘটে। এটি বিরল এবং আপনার সামগ্রিক শরীরকে প্রভাবিত করে। এর চিকিৎসার অবস্থা গুলি হলো :

• মধুমেহ
• রক্তে কম শর্করা ( হাইপোগ্লেসমিয়া)
• মেনোপজের সময় গরম অনুভূতি
• কিছু ধরনের ক্যান্সার
• থাইরয়েড সমস্যা
• হার্ট অ্যাটাক
• স্নায়ুতন্ত্রের অস্বাভাবিকতা

হাইপারহাইড্রোসিসের জটিলতাগুলি কী কী?

হাইপারহাইড্রোসিসের জটিলতাগুলি চিকিৎসার ক্ষেত্রে খুব একটা গুরুতর বলে মানা হয় না, তবে এটি মানসিক চাপের কারণ হতে পারে। হাইপারহাইড্রোসিসের সবচেয়ে সাধারণ জটিলতাগুলি হল :

1. মানসিক এবং সামাজিক যন্ত্রণা:

অতিরিক্ত ঘামতে থাকা মানুষেরা ভিড় এবং অন্যান্য সামাজিক ক্ষেত্রে বিব্রত হন। তারা এই ধরনের অবস্থা যতটা সম্ভব ততটা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। এটি তাদের আবেগপ্রবণ সম্পর্ককেও প্রভাবিত করে।

2. ত্বকের ছত্রাক সংক্রমণ:

সাধারণ ত্বকের তুলনায় অতিরিক্ত ঘাম হওয়া ত্বক বেশি সংক্রমণ-প্রবণ। জক ইচ অ্যাথলিটস ফুট এবং অন্যান্য ছত্রাক ঘটিত সংক্রমণ হতে পারে কারণ এগুলি আর্দ্র পরিবেশে বৃদ্ধি পায় এবং বেঁচে থাকে।

3. ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ

অতিরিক্ত ঘামের ফলে ব্যাকটেরিয়ার এবং ত্বকের সংক্রমণ হতে পারে।

4. ব্রোমহাইড্রোসিস

ঘামের সংস্পর্শে যখন ব্যাকটেরিয়া আসে তখন শরীর থেকে একটি দুর্গন্ধ আসাকে বলা হয় ব্রোমহাইড্রোসিস। এটি প্রাথমিকভাবে বগলে, যৌনাঙ্গে, আঙ্গুলের ফাঁকে এবং পায়ে হয়।

হাইপারহাইড্রোসিসের রোগীদের চিকিৎসা কী?

আপনার ডাক্তার আপনার চিকিৎসার ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা এবং অন্যান্য আরো পরীক্ষা করে আপনার অতিরিক্ত ঘামার ( হাইপারহাইড্রোসিস) অন্তর্নিহিত কারণগুলি নির্ণয় করবেন।

হাইপারহাইড্রোসিসের হওয়ার চিকিৎসার কারণ মূল্যায়ন করার জন্য, পরীক্ষা যেমন রক্ত এবং মূত্র পরীক্ষা পরিচালিত করা হয়। ঘামের পরীক্ষা যেমন আয়োডিন স্টার্চ পরীক্ষা, থার্মোরেগুলেটরি ঘাম পরীক্ষা এবং ত্বকের পরিবাহী পরীক্ষা করা হয়।

আপনার ডাক্তার সমস্যা হওয়ার অন্তর্নিহিত কারণগুলি ( যদি থাকে ) চিকিৎসা করবেন। যদি এই ধরনের কোন চিকিৎসার অবস্থা না থেকে থাকে, তবে তারা আপনার অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার নিয়ন্ত্রণ করতে এবং এর লক্ষণগুলি উপশম করার দিকে মনোনিবেশ করবেন।

হাইপারহাইড্রোসিসের জন্য ওষুধ

আপনার ডাক্তার যে ওষুধগুলো দিতে পারেন, সেগুলি হল

• অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড সহ অ্যান্টিপারস্পাইরেন্ট – এগুলি রাতে শুতে যাওয়ার আগে প্রভাবিত ত্বকে ব্যবহার করতে হবে।
• গ্লাইকোপাইরোলেট ক্রিম – এই ক্রিমটি মুখে এবং মাথায় হাইপারহাইড্রোসিস নিরাময় করতে কার্যকরী।
• স্নায়ু-অবরোধকারী ওষুধ – সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যেমন ঝাপসা দৃষ্টি, মুখের মধ্যে শুকনো ভাব এবং মূত্রথলির সমস্যা।
• অ্যান্টিডিপ্রেশনট – এই রোগের জন্য হওয়া ডিপ্রেশনের  যুদ্ধে সাহায্য করে।
• বোটুলিনাম টক্সিন ইনজেকশনগুলি সাময়িকভাবে ঘাম হওয়া স্নায়ুগুলি বন্ধ করে রাখে। এই চিকিৎসার প্রভাব সাধারণত 6-12 মাস থাকে।

হাইপারহাইড্রোসিসের জন্য অস্ত্রোপচার 

হাইপারহাইড্রোসিসের কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার প্রক্রিয়াকে বিকল্প হিসেবে দেখা যেতে পারে। এই চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে –

• মাইক্রোওয়েভ থেরাপি – এই থেরাপি, ঘর্মগ্রন্থিগুলিকে ধ্বংস করার উপর মনোনিবেশ করে। এটি কিছু অস্বস্তির সাথে ত্বকের সংবেদনশীলতা পরিবর্তন করতে পারে।
• ফটোডাইনামিক থেরাপি – ফটো ডায়নামিক থেরাপি হল তিনটি স্তরের থেরাপি যা হাইপারহাইড্রোসিসের তীব্রতাকে কমাতে পারে।
• ঘর্মগ্রন্থির অপসারণ- ঘাম হওয়ার জায়গা যেমন বগল থেকে  ঘর্মগ্রন্থির অপসারণ হয়তো সাহায্য করতে পারে।
• সিম্প্যাথেক্টমি – আপনার সার্জেন্ট হয়তো আপনার হাতের ঘাম নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুগুলিকে কাটতে, পোড়াতে অথবা ক্লাম্প করতে পারেন।

হাইপারহাইড্রোসিসের সাথে মোকাবিলা 

হাইপারহাইড্রোসিসের ঝুঁকি কমানোর জন্য এই সাবধানতা এবং প্রতিরোধমূলক উপায়গুলি অনুসরণ করুন:

• বিছানায় শুতে যাওয়ার আগে অ্যান্টিপারস্পাইরেন্ট লাগান। এগুলি ঘামের নালীগুলিকে বন্ধ করে এবং শরীরের পৃষ্ঠে ঘাম পৌঁছতে বাধা দেয়।
• চেষ্টা করুন শ্বাসযোগ্য এবং হাওয়া চলাচল করে এই ধরনের কাপড় পড়তে। হালকা কাপড়ের যথেষ্ট বায়ুচলাচল করার ফলে এটি আপনার শরীর এবং আপনাকে ঠান্ডা রাখবে।
• ক্যাফিন নেওয়া এড়িয়ে চলুন কারণ এটি শরীরের অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিকে উত্তেজিত করে। এর ফলে হাতের তালু এবং পায়ে ঘাম হতে পারে।
• প্রতিদিন স্নান করুন এবং নিজেকে যথাযথভাবে শুক্র করুন যা ঘামের ফলে হওয়া যে কোনো ব্যাকটেরিয়ার জমা হওয়া রোধ করে।
• শিথিলকরণ কৌশল যেমন যোগা এবং ধ্যান করুন।

কখন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন?

কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া ( হাইপারহাইড্রোসিস অবস্থা ) হয়তো একটি গুরুতর সমস্যাকে নির্দেশ করতে পারে। যদি আপনি এগুলি অনুভব করেন তাহলে আপনার ডাক্তারকে দেখান:

• বুকে ব্যথার সাথে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া,  বমি ভাব এবং হালকা মাথাব্যাথা।
• অতিরিক্ত ঘাম যা আপনার দৈনন্দিন জীবনে হস্তক্ষেপ করে।
• অতিরিক্ত ঘাম যা সামাজিকভাবে প্রত্যাহার পরে অথবা আবেগপূর্ণ সমস্যা তৈরি করে।
• কোন কারণ ছাড়াই রাতে ঘাম হওয়া।

সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন:

1. ডাক্তাররা হাইপারহাইড্রোসিসের জন্য কিভাবে পরীক্ষা করেন?

আপনার ডাক্তার সম্ভবত ঘামের পরীক্ষার দ্বারা আপনার অবস্থার তীব্রতা নির্ণয় করবেন। এরমধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলো থার্মোরেগুলেটরি পরীক্ষা, আয়োডিন স্টার্চ পরীক্ষা এবং ত্বক পরিবাহী পরীক্ষা। অতি সক্রিয় থাইরয়েড গ্রন্থি অথবা রক্তে কম শর্করা যা হাইপারহাইড্রোসিস হওয়ার কারণ হতে পারে, তার মতো অন্তর্নিহিত চিকিৎসার অবস্থা চিহ্নিত করার জন্য রক্ত পরীক্ষা এবং মূত্র পরীক্ষাও হয়।

2. আমি কীভাবে জানব যে আমার হাইপারহাইড্রোসিস  আছে?

হাইপারহাইড্রোসিস মানে অত্যধিক ঘাম যা গড় ঘামের মানদন্ডকে ছড়িয়ে যায়। অত্যধিক ঘাম সাধারণত সম্পূর্ণ শরীরকে প্রভাবিত করে, আপনার জামা সম্পূর্ণ ঘামে ভিজে যায় এবং কোনো জ্ঞানত কারণ ছাড়াই আপনার আন্ডারআর্ম এবং মুখ, হাতের তালু, হাত এবং পা অতিরিক্ত ঘর্মাক্ত হয়ে যায়।

3. হাইপারহাইড্রোসিস কি বয়সের সাথে সাথে চলে যায়?

না, হাইপারহাইড্রোসিস বয়সের সাথে চলে যায় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, এটি চিকিৎসা না করলে অথবা উপেক্ষা করলে আরো খারাপ হতে পারে। আপনার শরীরে ঘাম জমার কারণে বিভিন্ন সংক্রমণ হতে পারে। এটি বিব্রত হওয়া সহ সামাজিক এবং আবেগপূর্ণ ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।

4. হাইপারহাইড্রোসিস কি নিরাময় যোগ্য?

হয় অন্তর্নিহিত চিকিৎসার অবস্থাকে নিরাময় করে অথবা হাইপারহাইড্রোসিস এর লক্ষণগুলির উপশম ঘটিয়ে, হাইপারহাইড্রোসিসকে  নিরাময় করা সম্ভব। হাইপারহাইড্রোসিস নিরাময় হলেও আবার হতে পারে।