Verified By Apollo Opthalmologist April 10, 2024
4090সাধারণত তাপমাত্রা কমে গেলে চোখের ওপর নানা সমস্যার প্রভাব পড়ে, এর কারণ হলো ঠাণ্ডা আবহাওয়া চোখকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। সরাসরি ঠাণ্ডা লাগলে, রক্ত সরবরাহ কম হলে এবং চোখের আর্দ্রতা কমে গেলে চোখের সমস্যা দেখা দেয়।
শীতকালে চোখের যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা কী?
প্রচন্ড ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে চোখের নানারকম শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটে। শীতকালে চোখের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার কয়েকটি কারণ হল:
চোখের আর্দ্রতা কমে যাওয়া: শীতকালীন বায়ু শুষ্ক হয়। এটি চোখের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়। শুষ্কতার সাথে ভারসাম্য বজায় রাখতে চোখ থেকে জল নিঃসৃত হয়।
সূর্যের সংস্পর্শে: মানুষ ঠাণ্ডা আবহাওয়া থেকে বাঁচতে বেশির ভাগ সময় রোদে কাটায়। অতিরিক্ত রোদের প্রভাবে চোখের ক্ষতি শুধু গরমে না শীতেও হয়। বরফে পড়ার ফলে সূর্যালোকের ক্ষমতা বেশি হয় যা কর্নিয়ার গুরুতর ক্ষতি করে।
সরাসরি তাপের সংস্পর্শে: মানুষ ঘরে বা গাড়িতে ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হিটার ব্যবহার করে। হিটারের ব্যবহার বায়ুর আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়। গাড়ির এয়ার ভেন্ট থেকে নির্গত যে বায়ু মুখের ওপর পরে সেটি চোখের শুষ্কতা বাড়িয়ে দেয়।
সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া: ভাইরাসঘটিত সংক্রমণের ঝুঁকি শীতকালে বেড়ে যায়। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস চোখের ক্ষতি করতে পারে এবং কনজাংটিভাইটিস হতে পারে।
রক্ত সরবরাহের পরিবর্তন: মানুষের চোখে রক্ত সরবরাহ অনেক সময় কম থাকে। এটি ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য হয়, যা ধমনীর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
ঠাণ্ডা আবহাওয়া কীভাবে আপনার চোখকে প্রভাবিত করে?
ঠাণ্ডা আবহাওয়া আপনার চোখকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। শীতকালে আপনি চোখের যে সমস্যাগুলির সম্মুখীন হতে পারেন সে রকম কয়েকটি হল:
শুষ্ক চোখ: ঠাণ্ডা আবহাওয়া এবং কম আর্দ্রতার জন্য আপনার চোখ শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। এটি আরও গুরুতর হতে পারে যদি আপনি কন্ট্য়াক্ট লেন্স ব্যবহার করেন। শুষ্কতার জন্য মানুষের চোখ লাল হয়ে যেতে পারে, চুলকানি হতে পারে এবং চোখে কিছু পড়লে যেমন ব্যথা হয় সেরকম হতে পারে।
চোখে ব্যথা: অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় আপনার চোখে ব্যথা হতে পারে। কম তাপমাত্রায় অনেক সময় ঘুম থেকে উঠে চোখ খুলতে সমস্যা হয়। যখন আপনি চোখ খোলার জন্য বল প্রয়োগ করেন তখন আপনার ব্যথা লাগে কর্নিয়াল ফ্রীজিং-এর জন্য। চোখের পাতায় খিঁচুনি এবং ঝাপসা দেখতে পারেন।
ভিশন চেঞ্জ: চোখে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ না হওয়ায় আপনি দু-রকম দেখতে পারেন বা ঝাপসা দেখতে পারেন। কম তাপমাত্রায় আপনার ভিশন চেঞ্জও হতে পারে। তুলনামূলকভাবে একটু গরম জায়গায় (যেমন ঘরের ভেতর) আসার 30 মিনিট পরও যদি আপনার ভিশন চেঞ্জ না হয়, তাহলে একজন চোখের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
চোখ ভারী এবং ক্লান্ত হয়ে যাওয়া: শীতকালে আপনার চোখ ভারী হয়ে যেতে পারে। এই সময় সূর্য বেশি দৃশ্যমান না হওয়ায় শরীরে মেলানিন নামে একটি পদার্থ উৎপাদন হয়। এই পদার্থটির ফলে ঘুম-ঘুম ভাব আসে, আপনার চোখ ভারী হয়ে যেতেও পারে।
চোখ ফুলে যাওয়া: অত্যধিক শুষ্কতার জন্য আপনার চোখ ফুলে যেতে পারে এবং জ্বালা করতে পারে। এক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা জরুরী কারণ দীর্ঘদিন শুষ্কতার কারণে চোখের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। ঠান্ডার কারণে মানুষের কর্নিয়াল এডিমা হতে পারে।
সান–বার্ন: অতিরিক্ত রোদে ত্বক ছাড়াও চোখে সান-বার্ন হয়। যদি আপনার সান-বার্ন হয় তাহলে আপনার চুলকানি, ব্যথা এবং আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়তে থাকবে।
আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা বেড়ে যাওয়া: যাদের সংবেদনশীল চোখ, শীতকাল তাদের আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা আরও বাড়িয়ে দেয়। এদের চোখের পলক বারবার পড়তে থাকে এবং চোখে অস্বস্তি হয়। এমনকি আপনার চোখ যদি সংবেদনশীল নাও হয় তাহলেও শীতকালে আপনার “স্নো ব্লাইন্ডনেস” হতে পারে। যারা স্কিং-এর সাথে যুক্ত তাদের কাছে আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা একটি সাধারণ সমস্যা।
অতিরিক্ত জল প্ড়া: শীতকালে কারোর কারোর চোখ দিয়ে অতিরিক্ত জল বের হয়। চোখের শুষ্কতার সাথে ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য চোখ থেকে জল নির্গত হয়।
শীতে চোখের যত্ন নেওয়ার কয়েকটি উপায়:
যেহেতু উপরোক্ত বিষয় থেকে এটি প্রমাণিত যে ঠাণ্ডা আবহাওয়া এবং ঠাণ্ডা বায়ু চোখের ক্ষতি করতে পারে সেহেতু শীতকালে মানুষের চোখের যত্ন আরো বেশি নেওয়া উচিত। শীতকালে চোখের যত্ন নেওয়ার কয়েকটি উপায় হল:
সানগ্লাস পরা: শীতকালে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় আপনার সানগ্লাস পরা উচিত। আমেরিকান অ্যাক্যাডেমি অফ অফ্থালমলজিস্ট এর মতে, শীতকালে সানগ্লাস চোখকে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে রক্ষা করে। স্কিইং বা বরফ সম্পর্কিত বিভিন্ন খেলাধুলার ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি সমস্যা হয়ে যায়।
আপনার চোখের আর্দ্রতা বজায় রাখুন: শীতকালে আপনার চোখের আর্দ্রতা বজায় রাখা উচিত। ঘরে থাকার সময় হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন। আপনি মলম ব্যবহার করতে পারেন যা আপনার চোখকে মসৃণ করবে। ঘরের ভেতরে তাপমাত্রাকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করুন যাতে বায়ুতে আর্দ্রতা বজায় থাকে।
সংক্রমণ প্রতিরোধ করা: শীতকালে সংক্রমণের সংখ্যা বেড়ে যায় তাই চোখ রগড়াবেন না বারবার, কারণ এর ফলে সংক্রমণ হতে পারে। শুতে যাওয়ার আগে মেক-আপ তুলে, মুখ ধুয়ে নিতে হবে এবং ব্যক্তিগত মেক-আপ অন্যকে ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না।
ইন্ডোর এলার্জি থেকে দূরে থাকা: শীতকালে ইন্ডোর এলার্জি থেকে দূরে থাকতে হবে। পশুর খুশকি, আরশোলার মল এবং ঘরের ধুলো-বালি থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। শীতকালে ঘরে কম বায়ু চলাচলের জন্য এইগুলো মানুষকে বেশি আক্রমণ করে।
গরম হাওয়া: গরম হাওয়ায় চোখ শুষ্ক হয়ে যায়। চোখের ওপর সরাসরি গরম হাওয়া যেন না পড়ে। হেয়ার ড্রায়ার এমন ভাবে ব্যবহার করতে হবে যাতে চোখে হাওয়া না যায়। গাড়িতে যাতে এয়ার ভেন্ট মুখের থেকে দূরে থাকে সেটি খেয়াল রাখতে হবে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: খাদ্যাভ্যাস শীতকালে চোখের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড চোখের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। দিনে 6-8 গ্লাস জল খেতে হবে শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে।
বারবার চোখের পলক ফেলা: চোখের পলক ফেলার দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে। এটি চোখের জলকে সম্পূর্ণ চোখে ভালভাবে ছড়িয়ে পরতে সাহায্য করে এবং ধুলোবালি ও অন্যান্য অ্যালার্জি চোখ থেকে বের করে দেয়। তাই শুষ্ক চোখ এবং অ্যালার্জি প্রতিরোধ করার জন্য শীতকালে বারবার চোখের পলক ফেলা উচিত।
বাইরে কম সময়ে থাকা: আপনার বাইরে থাকার সময় কমাতে হবে এবং বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে তবেই বেরোতে হবে। যারা কন্ট্য়াক্ট লেন্স ব্যবহার করে তাদের বাইরে যাওয়ার সময় আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
ওয়ার্ম কম্প্রেস: চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানি এবং চোখের অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে ওয়ার্ম-কম্প্রেস সাহায্য করে। ওয়ার্ম-কম্প্রেস করার জন্য একটি কাপড়ের টুকরোকে গরম জলে ভেজাতে হবে এবং চোখের ওপর 10 মিনিট রাখতে হবে।
চোখের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ: ঠাণ্ডা আবহাওয়া এবং ঠাণ্ডা হাওয়া দীর্ঘস্থায়ী চোখের সমস্যার কারণ হতে পারে। যদি চোখের লাল হয়ে যাওয়া, ব্যথা, চুলকানি এবং দেখতে সমস্যা হওয়া বেশিদিন থাকে তাহলে একজন চোখের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। এটি কোনো সংক্রমণ হতে পারে আবার কর্নিয়ার সমস্যাও হতে পারে।
উপসংহার
শীতকালে চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া এবং ব্যথা হওয়া, ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে যাওয়া, ভিশন-চেঞ্জ, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা বেড়ে যাওয়া এবং চোখ থেকে জল পড়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। আমাদের সবার চোখের যত্ন ভালোভাবে নেওয়া উচিত এবং কোনো সমস্যা হলে একজন চোখের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
The content is curated and verified by expert ophthalmologists who take their time our to review the information provided