Verified By Apollo General Physician October 12, 2023
2011বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ম্যালেরিয়াকে আখ্যা দিয়েছে একটি প্রাণঘাতী রোগ হিসেবে যা পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট ও সংক্রামিত স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। যেহেতু সমস্ত পৃথিবী কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে মোকাবেলা করছে, ম্যালেরিয়ার মতো গুরুতর রোগ যাতে অবহেলিত না হয় তা নিশ্চিত করার জরুরি প্রয়োজন রয়েছে।
২০১৯ সালে, সারা পৃথিবী জুড়ে ২২৯ মিলিয়ন ম্যালেরিয়া রোগীর অনুমান করা যায়। সারা পৃথিবী জুড়ে ম্যালেরিয়া রোগের ৩ শতাংশেরই প্রতিনিধিত্ব ভারত করে। তবে শেষ কয়েক বছর ধরে ম্যালেরিয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কিছুটা কমেছে। ২০২৭ সালের মধ্যে ভারতের ম্যালেরিয়া মুক্ত দেশ হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এটিকে নির্মূল করার আশা রয়েছে।
কিছু জনসংখ্যা যেমন শিশু, ৫ বছরের কম বয়সী শিশু, গর্ভবতী মহিলা, এইডস/এইচআইভি রোগী এবং ঘন ঘন ভ্রমণকারীরা যথেষ্ট বেশি ঝুঁকিতে থাকে। যেসব জায়গায় মশার উৎপাত রয়েছে সেখানে সংক্রমণ বেশি।
কোভিড-১৯-এর মত নয়, যেখানে সংস্পর্শে আসার ২-১৪ দিন পরে লক্ষণগুলি দেখা যায়, একটি অ-প্রতিরোধী ব্যক্তির মধ্যে ম্যালেরিয়ার লক্ষণগুলি সাধারণত সংক্রামক মশার কামড়ের ১০-১৫ দিন পরে দেখা যায়। এর মধ্যে থাকতে পারে:
১. জ্বর
২. মাথাব্যথা
৩. শরীরের পেশিতে ব্যথা
৪. বমি
৫. ঠান্ডা
এই লক্ষণগুলি খুবই সামান্য হয় এবং কখনো কখনো এটি যে ম্যালেরিয়া তা শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে।আপনি যদি উপসর্গগুলির মধ্যে কোনোটি অনুভব করেন তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা খুবই আবশ্যক। এর কারণ হল ম্যালেরিয়াকে প্রাথমিকভাবে নির্ণয় করাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এবং শুধু তা নয়, কোভিড-১৯ সংক্রমণের সম্ভাবনা দূর করার জন্যও এটি প্রয়োজনীয়।
পূর্বে রোগের প্রাদুরভাবের অভিজ্ঞতা, উদাহরণস্বরূপ ২০২৪-২০১৬ সালের ইবোলা ভাইরাস মহামারীর ক্ষেত্রে, আমরা দেখেছি যে স্বাস্থ্য পরিষেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে একটি বাধার প্রভাব পড়েছিল যা ম্যালেরিয়া-সম্পর্কিত রোগের ব্যাপক বৃদ্ধির দিকে নিয়ে গিয়েছিল।
বর্তমান কোভিড-১৯ বিশ্ব মহামারীতেও একইরকম পরিস্থিতির পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে WHO এরমধ্যেই ম্যালেরিয়ার ১ মিলিয়নেরও বেশি নিশ্চিত হওয়া ঘটনা রিপোর্ট করেছে। কোভিড-১৯ এবং ম্যালেরিয়া দুটির একইসাথে সংক্রমণের কিছু ঘটনা শনাক্ত করা হয়েছে; এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং এটি ক্ষতিকারক প্রভাবকে আরও দ্বিগুণ করতে পারে।
তার থেকেও বড় কথা, বিশ্বের বেশিরভাগ অংশে লকডাউনের কারণে কীটনাশক-চিকিৎসা জাল (ITN) এবং ঘরের ভেতরের অংশে স্প্রে করার (IRS) কাজেও দেরি হয়েছে। বেশিরভাগ মানুষই কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে স্বাস্থ্যসেবার জায়গাগুলিতে যেতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক ছিলেন।
অতএব, জনগণ এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা ম্যালেরিয়ার বিস্তারকে কমাতে সাহায্য করতে পারে।
WHO দৃঢ়ভাবে দেশগুলিকে মহামারীর সময়ে তাদের ভেক্টর নিয়ন্ত্রিত কার্যক্রম স্থগিত না করার পরামর্শ দেয়। কোভিড ১৯-এ সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য ITN ও IRS এর প্রচারকার্যে কিছু পরিবর্তন করা যেতে পারে। রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রেও কোন পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।
এই দুর্দশাময় সময়ে, অনুমানমূলক চিকিৎসা বা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধের ব্যাপক পরিমাণে সরবরাহ করারও একটি কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত ম্যালেরিয়াজনিত মৃত্যুহার কমাতে এবং স্বাস্থ্যকর্মী ও তাদেরকে সুরক্ষিত রাখতে করা হয়। নজরদারি নিয়মমাফিক করা উচিত এবং সঠিকভাবে রোগের ধারা মূল্যায়ন করতে এবং স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ের কার্যক্রমগুলি কার্যকর করার জন্য রিয়েল-টাইম ডেটা সংগ্রহ করা উচিত।
যদিও প্রায় সমস্ত কর্মী সদস্য এখন কোভিড-১৯ ডিউটিতে রয়েছেন, তাদের মধ্যে কয়েকজনের সম্ভাব্য মশার প্রজনন জায়গাগুলি শনাক্ত করার জন্য নজরদারি চালিয়ে যাওয়ার জন্য এখনও প্রচেষ্টা করা উচিত।
ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে ক্রমবর্ধমান পরিমাণে ম্যালেরিয়ার ঘটনা নজরে আসছে। সেই কারণে জনগণকে সুস্থ রাখতে তহবিল বৃদ্ধি, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্থানীয় জনগণকে প্রশিক্ষণ দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।
ম্যালেরিয়া সংক্রমণ কমাতে এবং প্রতিরোধ করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ। এই পদ্ধতিতে, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী বা কীটপতঙ্গ (একসাথে ভেক্টর বলা হয়) যারা রোগের জীবাণু সৃষ্টি করে তাদের কমানো বা নির্মূল করা হয়। ম্যালেরিয়া ভেক্টর নিয়ন্ত্রণের জন্য নেওয়া দুটি প্রধান ব্যবস্থা নিম্নরূপ:
a. কীটনাশক-চিকিৎসা (মশা) জাল/ ITN :
একটি ITN-এর নীচে ঘুমালে মশা এবং মানুষের মধ্যে যোগাযোগ কমাতে সাহায্য করতে পারে, একই সাথে একটি কীটনাশক (তাদের বৃদ্ধি কমাতে বা সীমিত করতে সক্ষম) প্রভাব প্রদান করে।
b. ঘরের ভেতরে স্প্রে করা/ IRS :
এই প্রক্রিয়ায় বাড়ির ভিতরে কীটনাশক স্প্রে করা হয়, সাধারণত বছরে একবার বা দুবার।
উপসংহার
কোভিড-১৯ এর মত সংকট দেশের স্বাস্থ্যসেবায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে, তাই ম্যালেরিয়ার মতো প্রাণঘাতী রোগের বিস্তার কমাতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। এর উপসর্গগুলি নভেল করোনাভাইরাসের উপসর্গের সাথে একটা সাদৃশ্য বজায় রাখে এবং তাই, নাগরিকদের অবগত করা এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ম্যালেরিয়ার মতো প্রাণঘাতী রোগটিকে চিহ্নিত করার দিকে লক্ষ্য রাখাটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
চিকিৎসকদের এই ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত যে কোভিড-১৯ অন্যান্য সংক্রামক সমস্ত রোগকে সরিয়ে দিয়ে আসেনি। এই দুটি রোগের বিরুদ্ধে আমাদের একসঙ্গে লড়াই করতে হবে। প্রায়শই
জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)
Our expert general medicine specialists verify the clinical accuracy of the content to deliver the most trusted source of information makine management of health an empowering experience