Verified By Apollo General Physician October 12, 2023
47787দূষিত জলের মাধ্যমে যে সমস্ত ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ সংক্রমিত হয়, তাদের মধ্যে অন্যতম একটি হলো কলেরা। এই রোগের উপসর্গ হলো ডায়রিয়া এবং জলশূন্যতা। যদি এর চিকিৎসা না করা হয়, তবে সমস্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।
বেশিরভাগ শিল্পোন্নত দেশগুলোতে আধুনিক জল নিকাশি ব্যবস্থা এবং জলের ব্যবস্থাপনা কলেরা রোগকে প্রায় দূর করে দিয়েছে। কিন্তু আফ্রিকা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং হাইতির মত কিছু কিছু অঞ্চলে আপনি এখনো কলেরার রোগী দেখতে পাবেন। দারিদ্র্য কবলিত যুদ্ধ বিধ্বস্ত এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা ঘিঞ্জি জায়গায় এবং যথেষ্ট অনুপযুক্ত অবস্থায় বসবাস করেন। এর কারণে কলেরা মহামারী ছড়ানোর সুযোগ বৃদ্ধি পায়।
এই রোগটিকে সহজেই চিকিৎসা করা যায় প্রচন্ড জলশূন্যতা থেকে মৃত্যুর ঘটনাকে একটি সহজ এবং সাধ্যের মধ্যে রিহাইড্রেশন উপায়ে আটকানো যায়।
যেমনটা আগে বলা হয়েছে, কলেরা হল একটি ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণ, যা দূষিত জলের মাধ্যমে ছড়ায়। ভি. ব্যাকটেরিয়া এই রোগের জন্য দায়ী এবং 1883 সালে জার্মান ব্যাকটেরিয়া বিশারদ রবার্ট কচ এটি আবিষ্কার করেছিলেন।
ইজিপ্টে মহামারী চলার সময় রবার্ট কচ এই রোগটি সম্পর্কে গবেষণা করেন এবং কলেরা রোগে মৃত রোগীদের অন্ত্রে এই ব্যাকটেরিয়া খুঁজে পান। কিন্তু তিনি জীবাণুটিকে আলাদা করতে পারেননি এবং এর দ্বারা সংক্রমিত প্রাণীদের আলাদা করে শনাক্ত করতে পারেননি। যদিও তার পরের বছরে ভারতে তিনি সফলভাবে ব্যাকটেরিয়া থেকে পৃথক করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর গবেষণায় আবিষ্কৃত হয়েছিল যে এই ব্যাকটেরিয়াগুলি স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা ভিজে মাটি এবং কলেরা রোগের মধ্যে জন্মায় এই ব্যাকটেরিয়াটি অন্যান্য আরো বিভিন্ন স্থানে বাস করে যেমন জলতল, উদ্ভিদ, মিজেসের (এক ধরণের মাছি) ডিম ও খোলক।
যখন এই ব্যাকটেরিয়াগুলি একটি খারাপ এবং অস্বাস্থ্যকর এলাকায় প্রবেশ করে, তখন বিষাক্ত স্ট্রেইনটি একটি বিষ উৎপন্ন করে, যার কারণে ব্যাপক ডায়রিয়া হয় এবং এটি একটি গুরুতর মহামারীতে পরিণত হয়। এই মহামারি আবহাওয়ার পরিবর্তন, হ্রাসপ্রাপ্ত জনসংখ্যা এবং উন্নত পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
কলেরা হওয়ার মুখ্য কারণ হলো ভিব্রিও কলেরি নামক একটি ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কারণে শরীর থেকে বিপুল পরিমাণে জল বাইরে বেরিয়ে যায়। তাই ডায়রিয়া হয় এবং শরীর থেকে দ্রুত তরল পদার্থ এবং ইলেক্ট্রোলাইট হ্রাস পায়। এটি কলেরা রোগীদের ক্ষুদ্রান্ত্রে উপস্থিত।
যেসব মানুষদেরএই রোগের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটেছে, তারা কোন প্রকার অসুস্থতার লক্ষণ লক্ষ্য করতে নাও পারেন। যদিও তারা তাদের মল থেকে ব্যাকটেরিয়া ছড়ানো, খাবার এবং জল দূষিত করার জন্য দায়ী। ব্যাকটেরিয়াটি উপস্থিত:
অধিকাংশ সংক্রামিত মানুষ অসুস্থ হন না বা তারা যে সংক্রামিত তা জানতেও পারেন না। তারা 7 থেকে 14 দিন ধরে তাদের মলের মাধ্যমে এবং জল দূষিত করে কলেরা সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ছড়ায় এবং অন্যদের সংক্রামিত করে চলে।
কিছু কিছু কলেরা-সংক্রামিত রোগীদের অল্প বা মাঝারি ডায়ারিয়ার উপসর্গ দেখা যায়। কলেরা ও অন্যান্য রোগ, যাতে এই একই জাতীয় সমস্যা হতে পারে, তাদেরকে পৃথক ভাবে চিহ্নিত করা মুশকিল হতে পারে। কম গুরুতর ক্ষেত্রে সংক্রামিত হবার কিছুদিনের মধ্যে রোগী কলেরার লক্ষণ লক্ষ্য করতে শুরু। নিম্নলিখিতগুলি কলেরার উপসর্গ:
যেসব বাচ্চারা কলেরায় সংক্রমিত হয়েছে, তারা বড়দের মতো উপসর্গ প্রদর্শন করে। কিন্তু তাদের কিছু আলাদা উপসর্গ থাকতে পারে, যেমন:
শিল্পোন্নত দেশগুলিতে কলেরার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশী। যদি আপনি একটি সংক্রামিত জায়গায় থেকে থাকেন, তবে যদি আপনি কঠোরভাবে খাদ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত বিধিনিষেধগুলি মেনে চলেন, তবে আপনার সংক্রামিত হবার সম্ভাবনা খুবই কম। যদিও, যদি একটি কলেরা আক্রান্ত স্থানে যাওয়ার ঠিক পরেই আপনার প্রবল ডায়ারিয়া হয়, তবে অতি সত্বর চিকিৎসকের সাহায্য নিন এবং চিকিৎসা করান। ঝুঁকির লক্ষণ
অত্যন্ত গুরুতর ক্ষেত্রগুলিতে কলেরা দ্বারা সংক্রমিত মানুষ জলশূন্যতা বা শকের কারণে মারা যেতে পারেন। জলশূন্যতা এবং শক ছাড়া কলেরার অন্য কিছু জটিলতা আছে, সেগুলি হল:
নিম্ন রক্তচাপ ( হাইপোগ্লাইসেমিয়া) – কলেরা ব্যক্তির রক্তের শর্করার মাত্রা অত্যন্ত কমিয়ে দিতে যার কারণে ব্যক্তি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়ে যে তার খাওয়া বা কিছু পান করার শক্তি থাকে না। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণে সিজার হয়, অজ্ঞান হয়ে যায় অথবা মৃত্যুও ঘটতে পারে, বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে।
পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়াLow potassium levels – কলেরা আক্রান্ত ব্যক্তিদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ যেমন, পটাশিয়ামের ঘাটতি হচ্ছে তাদের মলের মাধ্যমে। কম পরিমাণে পটাশিয়াম থাকলে তা হৃদপিণ্ড এবং স্নায়ুর কার্যকারিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, এমনকি এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।
বৃক্ক বিকল হয়ে যাওয়া – কলেরার সময় বৃক্ক তাদের পরিস্রাবণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এর কারণে অতিরিক্ত পরিমাণে তরল পদার্থ, ইলেকট্রোলাইট এবং বর্জ্য পদার্থ দেহে জমা হয়।
সাধারণত একজন জলশূন্য ব্যক্তির শরীরে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি দেখা যায় :
মল পরীক্ষা করার মাধ্যমে কলেরার ব্যাকটেরিয়াকে শনাক্ত করা যেতে পারে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ডাক্তারেরা এই রোগ নির্ণয়ের জন্য কলেরা ডিপস্টিক টেস্ট করেন। দ্রুত নিশ্চিত করা হলে তা সরকারকে কলেরার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করে।
কলেরা রোগ কলেরা ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়, যার জন্য তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা প্রয়োজন হয়, যাতে জটিলতাগুলিকে এড়ানো যায়।
নিম্নলিখিত প্রতিরোধগুলি মেনে চললে কলেরাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় :
যদি আপনি একজন প্রাপ্তবয়স্ক যিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কলেরা আক্রান্ত অঞ্চলে এসেছেন তবে আপনাকে মুখের মাধ্যমে ভ্যাক্সকোরা নামক একটি টিকার তরল ডোজ দেওয়া হবে। আপনার ঘোরার অন্ততপক্ষে 10 দিন আগে আপনাকে এই টিকা নিতে হবে। যদিও এই ঘোরা হয়ে যাওয়ার পর কলেরা আটকানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বহুসংখ্যক দেশ মৌখিক মাধ্যমে টিকাকরণও করায়। আরও তথ্যের জন্য আপনাকে আপনার নিকটবর্তী ডাক্তার অথবা স্থানীয় স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
সকলেই কলেরার গুরুতর দিকে যাওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যদিও পূর্ববর্তী সময়ে একজন সংক্রামিত মায়ের কাছে স্তন্যপান করার পর একটি সদ্যোজাতের যত্ন করার বিষয়টি ব্যতিক্রমী। বেশ কিছু কারণের জন্য আপনার কলেরার গুরুতর লক্ষণ এবং উপসর্গ দেখা দিতে পারে। ঝুঁকির কারণগুলি হল নিম্নরূপ:
কলেরার গুরুতর ক্ষেত্রে এটি অতি দ্রুত প্রাণঘাতী হতে পারে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে তরল পদার্থ এবং ইলেক্ট্রোলাইট বেরিয়ে গেলে কয়েক ঘন্টার মধ্যে মৃত্যু হতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্র ছাড়া কিছু ব্যক্তিদের কলেরার উপসর্গগুলি শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন পরেও জলশূন্যতা বা শকের জন্য কোন চিকিৎসা হয় না। শক এবং মৃত্যু কলেরার মুখ্য জটিল সমস্যা। অন্যান্য জটিলতাগুলি হল:
অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে এবং দূষিত জল থেকে আপনি সংক্রামিত হতে পারেন, তবু প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলি মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি একজন কলেরা রোগী হন, তবে আপনার অতিসত্বর চিকিৎসকের সাহায্য প্রয়োজন, যাতে আপনার দ্রুত চিকিৎসা করা যায় এবং আপনার কলেরা রোগকে প্রাণঘাতী হওয়া থেকে আটকানো যায়।
যদি আপনি একটি কলেরা আক্রান্ত অঞ্চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে আপনাকে অবশ্যই কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, যেমন
আফ্রিকা, হাইতি এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এখনও দেখা যায়।
হ্যাঁ, কলেরা হলো নীল মৃত্যু। এটি কলেরার অপর নাম তার কারণ এই রোগে প্রচুর পরিমাণে তরল পদার্থ শরীর থেকে বাইরে বের হয়ে যাওয়ার কারণে কলেরা রোগীর শরীর নীল হয়ে যায়।
আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো, ইথিওপিয়া এবং নাইজেরিয়ায় ব্যাপক কলেরার প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া গেছে।
কলেরার জন্য ভিব্রিও কলেরি ব্যাকটেরিয়া দায়ী।
যেহেতু কলেরার কারণে জলশূন্যতা দেখা যায়, তাই যে তরলগুলি ইলেক্ট্রোলাইট এবং নুনকে প্রতিস্থাপিত করতে পারে সেই ধরনের তরল পান করা যেতে পারে। একজন রোগীকে প্রচুর পরিমাণে জল, সোডাজল এবং নারকেলের জল সারাদিন ধরে দেওয়া উচিত।
মল এবং দূষিত জলের মাধ্যমে এটি এক ব্যক্তি থেকে অপর ব্যক্তিতে ছড়িয়ে যেতে পারে।
Our expert general medicine specialists verify the clinical accuracy of the content to deliver the most trusted source of information makine management of health an empowering experience