Verified By Apollo General Physician October 6, 2023
5751চিকুনগুনিয়া হল আরবোভাইরাসের কারণে সৃষ্ট একটি জ্বর। এই ভাইরাসটি আলফাভাইরাস গণভুক্ত এবং টোগাভিরিডে গোত্রভুক্ত। এটি মশার কামড়ের মাধ্যমে সংক্রামিত হয়। সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ জুড়ে চিকুনগুনিয়া জ্বরের প্রাদুর্ভাব এর খবর পাওয়া গেছে। পূর্ব আফ্রিকায় হাজার হাজার 1952সালে এই সংক্রমণ প্রথমবার দেখা গিয়েছিল।
হঠাৎ করে শুরু হয় এবং এটি ভয়াবহ পর্যায়ে গেলে এতে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়, যেমন, হাড়ের যন্ত্রণা, ত্বকের ফুসকুড়ি এবং পেশিতে ব্যথা। অসমর্থ আর্থারাইটিস এবং ফুলে যাওয়া নরম অস্থিসন্ধিও কিছু রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায়। ভয়াবহ পর্যায়ে ঘুরে ঘুরে জ্বর আসে, অদ্ভুত রকমের শারীরিক দুর্বলতা দেখতে পাওয়া যায়, প্রদাহ সৃষ্টিকারী পলিআর্থারাইটিস এবং শক্ত হয়ে যাওয়া দেখা যায়। অকিউলার, স্নায়বিক এবং মিউকোট্যানিয়াস। প্রকাশও লক্ষ্য করা যায়। প্রায় 15% রোগীর ক্রনিক আর্থারাইটিস হয়। চিকুনগুনিয়া ভাইরাসঘটিত রোগ নির্ণয়ের জন্য ইমিউনোগ্লোবিউলিন এম এবং ইমিউনোগ্লোবিউলিন জি অ্যান্টিবডিকে চিহ্নিত করে সেরোডায়াগনস্টিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
চিকুনগুনিয়া একটি স্ব-সীমাবদ্ধকারী রোগ হলেও কিছু কিছু সময় নিম্নলিখিত কিছু উপসর্গ দেখাতে পারে, যেমন হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া জ্বর, মেনিঙ্গো-এন্সেফালাইটিস এবং রক্তপাত। চিকেন গুনিয়া রোগের জন্য কোন টিকা উপলব্ধ নেই। এই রোগটি ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করে, জনগণকে এবং জনস্বাস্থ্য আধিকারিককে শিক্ষিত করে প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের খবর এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ অঞ্চল এবং ভারত মহাসাগর থেকে পাওয়া গেছে। এটি ক্যারিবিয়ান, দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং উত্তর আমেরিকাতেও ছড়িয়ে গেছে।
যেখানে মশা এবং মানুষ উভয়েই এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত, সেখানে এর প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে। এই ভাইরাসটি একজন মায়ের থেকে তার সদ্যজাত সন্তানের মধ্যে, এক ব্যক্তি থেকে অপর ব্যক্তির দেহে রক্ত সঞ্চালনের ফলে চলে যেতে পারে।
চিকুনগুনিয়া রোগের কারণ হলো এই রোগে মশার কামড়ের মাধ্যমে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে যায়। চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের (CHIKV) প্রধান বাহক হল এডিস ইজিপ্টি অথবা হলুদ জ্বরের মশা। CHIKV আলফা ভাইরাস এবং মশাজাত আর্বোভাইরাস।
মূলত ক্রান্তীয় অঞ্চলে এই ভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এডিস অ্যালবোপিকটাস হল আরেক ধরনের মশার প্রজাতি যারা এর বাহক রূপে পরিচিত। এডিস ইজিপ্টি দিনের বেলায় কামড়ায়। বহু বছর ধরে এডিস মশার বিবর্তন ঘটেছে এবং এটি নিজেদের মানুষকে কামড়ানোর জন্য অভিযোজিত করে ফেলেছে। এমনকি তারা যখন নিচ থেকে মানুষদের আক্রমণ করে, তখন তাদের পাখনার গুনগুন আওয়াজকেও তারা কমিয়ে ফেলেছে, যাতে কেউ বুঝতে না পারে। এই মশাদের সাধারণত শহরাঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। এডিস মশার প্রজননের জন্য কেবল মাত্র 2 মিলিলিটার জল প্রয়োজন এবং তাদের ডিমগুলি প্রায় এক বছর পর্যন্ত সুপ্ত থাকতে পারে। বাহক মশা সংক্রমণের ক্ষমতা পরের প্রজন্মেও ঢুকিয়ে দিতে পারে।
একটি সংক্রামিত মশার লালার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করে। যখন একটি সংক্রামিত মশা কামড়ায়, তখন ভাইরাসটি ব্যক্তির রক্তের ধারার মধ্যে প্রবেশ করে। ভাইরাসটি রক্তে প্রবেশ করার পর এটি গলা নাক এবং মুখে উপস্থিত সমস্ত কোশগুলিকে সংক্রামিত করে।
এর পরে, ভাইরাসটি রক্তে বহুগুণিত হয়ে যায় এবং সমস্ত দেহে ছড়িয়ে পড়ে। মশার কামড়ের দুই থেকে বারো দিন পরে উপসর্গগুলি দেখা যায়। সাধারণত অস্থি সন্ধিতে প্রবল ব্যথা, হঠাৎ হঠাৎ জ্বর আসা এবং ত্বকে ফুসকুড়ি বেরোনো দেখে চিকুনগুনিয়া জ্বরকে অন্য জ্বরের থেকে পৃথক করা যায়।
যখন কোন মশা একজন সংক্রামিত ব্যক্তিকে কামড়ায়, তখন তার দেহ থেকে মশার দেহে ভাইরাসটি প্রবেশ করে। এটি তার ডিম্বাশয়, মধ্য অন্ত্র, স্নায়ু কলা এবং চর্বির মধ্যে এর প্রতিলিপি তৈরি করে। তারপর ভাইরাসের জন্ম দেয় এবং মশার লালাগ্রন্থিতে যাত্রা করে। একবার যখন এই সংক্রামিত মশা অন্য কোন ব্যক্তিকে কামড়ায়, তখন এই ভাইরাসটি তার দেহে চলে যায়।
চিকুনগুনিয়ার দুটি সঞ্চরণ চক্র হল প্রাণীবাহিত চক্র এবং আকস্মিক অতিমারী চক্র।
প্রাণীবাহিত চক্রটি সাধারণত আফ্রিকায় দেখতে পাওয়া যায়। এডিস ফার্সিফার, এডিস টায়লোরি, এডিস আফ্রিক্যানাস অথবা এডিস লুটিওসেফালাস বাহক হিসাবে কাজ করে। সম্ভবত প্রধান প্রাণীবাহিত বাহক হল এডিস ফার্সিফার। এটি মনুষ্য গ্রামে প্রবেশ করে এবং বাঁদর থেকে মানুষের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে দেয়।
চিকুনগুনিয়া ভাইরাস হঠাৎ করে ছড়িয়ে যেতে পারে, শহরাঞ্চলে সঞ্চালন চক্র দুটির উপর নির্ভর করে এ. ইজিপ্টি, এ. অ্যালবোপিকটাস এবং মানুষের বহুগুণিত ধারক। এই মহামারী চক্রের ফলে মানুষের মধ্যে বহুমাত্রায় মশা গঠিত সংক্রমণ ঘটে। এটি মহামারীর সঞ্চারণ এর জন্য আদর্শ। প্রাপ্ত বয়স্ক স্ত্রী মশা মানব দেহের ওপর খাওয়াতে বেশি পছন্দ করে তারা অনেক সময় একটিমাত্র কোন ট্রাফিক চক্রের মধ্যে অনেকবার রক্ত শোষণ করে। তাদের পছন্দের লার্ভার জন্মস্থান হিসেবে একটি কৃত্রিম পাত্রে তারা লার্ভার জন্ম দেয় এবং মানুষের শরীরে যাওয়ার জন্য সুরক্ষিত স্থানে বসে বিশ্রাম করে। মানুষ উচ্চ-টিটার ভিরেমিয়া তৈরি করে যা সাধারণত উপসর্গগুলির প্রকট হবার প্রথম চার দিনে দেখা যায়।
একজন ব্যক্তির চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের দ্বারা সংক্রমিত হবার পরে উপসর্গগুলি দেখা যাওয়া পর্যন্ত এর উন্মেষপর্ব চলতে থাকে। এটা এক থেকে বারো দিনের মধ্যে হতে পারে। জ্বর সাধারণত দুই বা তিন নম্বর দিন থেকে শুরু হয়।
চিকুনগুনিয়া রোগের এবং উপসর্গগুলি নিম্নলিখিতগুলির মধ্যে একটি বা একাধিক গুলি দিয়ে শুরু হয়: জ্বর, ঠান্ডা স্রোত বয়ে যাওয়া, বমি করা, মাথা ঘোরা, অস্থিসন্ধিতে যন্ত্রণা, মাথা যন্ত্রণা। রোগীর সাধারণত 100 থেকে 104 ডিগ্রি সেলসিয়াস জ্বর থাকে। এই উপসর্গগুলির পাশাপাশি হঠাৎ করে ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা যায়।
যদি কোন ব্যক্তি অন্য রোগের জন্য ইতিমধ্যে কোন ওষুধ খাচ্ছেন, তবে অতিরিক্ত ওষুধ খাওয়ার আগে ডাক্তারকে তা জানান।
মশার কামড় কম করার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।
CHIKV এর জন্য এখন কোন বাণিজ্যিক টিকা নেই।
চিকুনগুনিয়া জ্বর হলো একটি সংক্রামক রোগ যা চিকেন গুনিয়া ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট হয় এবং সংক্রামিত মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়।
একজন ব্যক্তির চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের দ্বারা সংক্রমিত হবার পরে উপসর্গগুলি দেখা যাওয়া পর্যন্ত এর উন্মেষপর্ব চলতে থাকে। এটা এক থেকে বারো দিনের মধ্যে হতে পারে।
3) চিকুনগুনিয়া জ্বরের কি কোন ঋতুগত ধরণ আছে?
চিকুনগুনিয়া বছরের যে কোনো মাসেই ছড়াতে পারে। রোগের প্রাদুর্ভাব বর্ষা পরবর্তী সময়ে বেশি দেখা যায়।
চিকুনগুনিয়া জ্বর অল্পসময়ের জন্য থাকে এবংম্যাকিউলোপ্যাপুলার ফুসকুড়ি প্রচন্ড বেশি থাকে এবং ব্যাপক অস্থিসন্ধি/ হাড়ের ব্যাখ্যা এই রোগে খুবই সাধারণ এবং এটি প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকে। কিন্তু রক্তক্ষরণ এবং শক খাওয়া খুবই বিরল।
অন্যদিকে ডেঙ্গুতে দীর্ঘসময় ধরে জ্বর থাকে। ডেঙ্গুর জ্বরের সাথে সাথে রক্তক্ষরণসহ জ্বর মাড়ি থেকে রক্তপাত নাক এবং গ্যাস্ট্রো-অন্ত্রে ও ত্বক থেকে রক্তপাত হতে পারে। কিছু বিরল ক্ষেত্রে ডেঙ্গু শকও হতে পারে।
চিকুনগুনিয়া রোগের চিকিৎসা মূলত উপসর্গভিত্তিক।
Our expert general medicine specialists verify the clinical accuracy of the content to deliver the most trusted source of information makine management of health an empowering experience