Verified By Apollo General Physician October 7, 2023
8448যখন মানবদেহের হৃদপিন্ড, ধমনী থেকে রক্ত বাইরে বার করে দেয়, তখন রক্তবাহের প্রাচীরে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে চাপ দেয়। এই চাপটিকে চিকিৎসার ভাষায় রক্তচাপ বলা হয়।
উচ্চ রক্তচাপ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক এবং এটি অন্যান্য রোগ ও ডেকে আনতে পারে, যেমন বৃক্কের সমস্য্ নানা হৃদপিণ্ড ঘটিত রোগ এবং স্ট্রোক। তাই কোন মেডিক্যাল প্রফেশনালের দ্বারা বা নিজে নিজেই বাড়িতে আপনার রক্তচাপকে নিয়মিত পরীক্ষা করা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি সাধারণ রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা যার জন্য কেবল মাত্র এক মিনিট সময় লাগে এবং যে সমস্ত রোগীরা হাইপার টেনশনে ভুগছেন, এটি তাদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন পরীক্ষা করা উচিত।
যে যন্ত্রটিকে রক্তচাপ মাপার জন্য ব্যবহার করা হয়, তার নাম হলো স্ফিগমোম্যানোমিটার। এতে ম্যানোমিটার নামে একটি যন্ত্র রয়েছে। এর একটি অংশ রোগীর বাহুতে শক্ত করে বাঁধা থাকে এবং এটি বায়ু দিয়ে ফোলানো থাকে। এই যন্ত্রের পূর্ববর্তী ভার্সনগুলোতে নাড়ির স্পন্দনের হার একটি স্টেথোস্কোপের সাহায্যে মাপা হতো, কিন্তু বাজারে বর্তমানে ডিজিটাল রক্তচাপ মাপার মনিটর পাওয়া যায় যেগুলি নাড়ির স্পন্দনও পরিমাপ করতে পারে।
ডিজিটাল রক্তচাপ মাপার যন্ত্রটির একটি অংশ যখন রোগীর ঊর্ধ্ব বাহুতে শক্ত করে আটকানো থাকে এবং এই যন্ত্রটি সুইচ অন থাকে তখন এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে রোগীর রক্তচাপ এবং নাড়ির স্পন্দন পরিমাপ করে নথিবদ্ধ করতে পারে। তাই এখন নিজের বাড়িতে আপনার রক্তচাপ পরীক্ষা করা অনেক বেশি সহজ হয়ে গেছে।
কম বয়সী লোকদের তুলনায় 40 এর বেশি বয়সী মানুষদের আরো বেশি ঘন ঘন রক্তচাপ পরীক্ষা করা উচিত। যেমন যে রোগীরা নানা ভুগছেন বা অন্য কোনো গুরুতর রোগে ভুগছেন, তাদের নিয়মিত রক্তচাপের মাত্রা পরিমাপ করা উচিত।
একটি রক্তচাপ পরীক্ষা খুবই দ্রুত এবং সহজ পদ্ধতি। এটি পরিমাপ করার সময় কোন যন্ত্রণার অনুভূতি হয় না। ফুলে থাকা অংশটি বাহুকে অল্প কিছু সেকেন্ডের জন্য চেপে ধরে থাকে। যার ফলে বিশেষত বয়স্ক মানুষ এবং দুর্বল মানুষদের পেশিতে কিছুটা ব্যথা হতে পারে।
কিন্তু এই অংশটিকে বাহু থেকে খুলে নিলে এই যন্ত্রণা আর থাকে না তাই রক্তচাপ পরিমাপ করার পরীক্ষাটি একটি ঝুঁকিহীন রোগ নির্ণয় পরীক্ষা যা যেকোন মানুষ, তাদের বয়স এবং স্বাস্থ্যের নানা অবস্থা ভেদে এই পরীক্ষাটি করতে পারেন।
রক্তচাপ পরীক্ষার জন্য আপনার বিশেষ কোনো প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই। তবুও ডাক্তাররা এই পরীক্ষার অন্তত এক ঘণ্টা আগে তাদের রোগীদের ধূমপান না করতে এবং কোন ক্যাফিন সমৃদ্ধ পানীয় পান করতে বারণ করতে পারেন, কারণ নিকোটিন এবং ক্যাফেইন রক্তচাপ এবং নাড়ির স্পন্দন এর হার বৃদ্ধি করে।
এই পরীক্ষার জন্য একটি শার্ট বা একটি ছোট হাতাযুক্ত টপ পরা ভালো, যাতে যন্ত্রের ওই অংশটিকে আপনার ঊর্ধ্ব বাহুতে খুব সহজেই বাঁধা যায়। আপনি একটি চেয়ারে আরাম করে বসতে পারেন এবং এই পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে বেশ কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম করতে পারেন, যাতে আপনার রক্তচাপ এবং নাড়ির স্পন্দনের হার আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
যদি আপনি বর্তমানে অন্য কোন অসুখের জন্য ওষুধ খেয়ে থাকেন তবে তা আপনার ডাক্তারবাবুকে জানান কারণ কিছু কিছু ওষুধ আপনার রক্তচাপের ওপর বিপরীত প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে।
আপনাকে একটি চেয়ারের উপর বসতে হবে, যাতে আপনার পা দুটি মেঝের ওপর স্বচ্ছন্দভাবে বিশ্রাম করতে পারে। আপনাকে টেবিলের ওপর আপনার হাত দুটিকে ছড়িয়ে দিতে হবে, খেয়াল রাখবেন যাতে আপনার হাত দুটি হৃদপিন্ডের সাথে একই উচ্চতায় থাকে। তারপর একজন প্রকৌশলী অথবা সেবিকা যন্ত্রের একটি নির্দিষ্ট অংশকে আপনার ঊর্ধ্ব বাহুতে শক্ত করে বেঁধে দেবেন, যেটা আপনার কনুই পর্যন্ত উঠে যাবে। এই অংশটির আকার আপনার বাহুর আকারের সাথে একেবারে মানানসই হতে হবে। নয়তো রক্তচাপ মাপার যন্ত্র থেকে ভুল পরিমাপ পাওয়ার একটি সম্ভাবনা থেকে যায়।
আগে এই অংশটিতে একটি ছোট পাম্পের মাধ্যমে এর মধ্যে বায়ু ঢুকিয়ে খোলানো হত এখন ডিজিটাল রক্তচাপ মাপার যন্ত্রের এই অংশটি যন্ত্রটির সুইচ অন করা হলেই নিজে নিজে ফুলে যায়।
ফুলে থাকা অংশটি আপনার বাহুকে ভীষণ জোরে চেপে ধরবে যাতে আপনার ঊর্ধ্ববাহুতে থাকা ব্রকিয়াল ধমনীর মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ কয়েক সেকেন্ডের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। যখন রক্তচাপের মাত্রা এবং নাড়ির স্পন্দনের হার নথিবদ্ধ করা চলতে থাকে, তখন ফোলানো অংশটির মধ্যেকার বায়ু নিজে থেকে বা কোনো ব্যক্তি এটি আর করে দেন।
সম্পূর্ণ পদ্ধতিটি এক মিনিটের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়ে যায় এবং তাই এটিকে কমপক্ষে তিন বার করতে হবে তাতে রোগী উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপে ভুগে থাকুন না কেন।
সাধারণত একজন মানুষের রক্তচাপ প্রতি মিলিলিটার পারদ (mm Hg) হিসাবে পরিমাপ করা হয়। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ হওয়া উচিত 120/80 mm Hg. এখানে প্রথম নম্বরটি সিস্টোলিক চাপ, অর্থাৎ যখন হৃদপিণ্ড রক্তকে পাম্প করে ধমনীতে পৌঁছে দেয়, সেই চাপকে নির্দেশ করে। দ্বিতীয় নম্বরটি ডায়াস্টোলিক অর্থাৎ এটি দুটি পরপর হৃদস্পন্দনের মধ্যবর্তী রক্তচাপকে বোঝায়।
যদি রক্তচাপ 90/60 mm Hg এর কম হয়ে থাকে তবে রোগী নিম্ন রক্তচাপে ভুগছেন কারণ এই রেঞ্জটি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক কম। যদি রোগীর রক্তচাপ 130/85 mm Hgএর বেশি হয়ে থাকে, তবে তিনি হাইপার টেনশনে ভুগছেন। হাইপারটেনশনের প্রাবল্যকে সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক চাপের উচ্চ মানের ওপর নির্ভর করে হাইপারটেনশন 1 এবং হাইপারটেনশন 2 বলে শ্রেণীবিভক্ত করা হয়েছে।
যদি আপনার রক্তচাপ 180/120 mm Hg এর থেকে বেশি হয়, তবে তৎক্ষণাৎ আপনার একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত যাতে হাইপারটেনশনের চরম অবস্থার ভয়াবহ ফলকে প্রতিরোধ করা যায়।
আপনার গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলি সঠিকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে, যার কারণে একটি প্রাণঘাতী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আপনার শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে, প্রচন্ড বুকে ব্যথা হতে পারে, পিঠের ব্যথা হতে পারে, আপনার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পেশীগুলি অসাড় হয়ে যেতে পারে, চোখের দৃষ্টি অস্পষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং হাইপারটেনশনের ব্যাপক আকারের জন্য কথাবার্তা বলতে সমস্যা হতে পারে। যদি আপনার রক্তচাপ 90/60 mm Hg এর নিচে কমে যায়, তবে আপনার একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। খুব কম রক্তচাপ থাকলে আপনার মাথা ঘুরে যেতে পারে, এমনকি দুর্বলতার জন্য আপনি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন, যার জন্য আপনার অতি দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। যদিও উচ্চ রক্তচাপ যুক্ত রোগীদেরই জীবনের ঝুঁকি বেশি থাকে, কারণ বেশিরভাগ সেরিব্রাল স্ট্রোকগুলি উচ্চ রক্তচাপের ঘটনাকে দীর্ঘসময় ধরে অবহেলা করার ফলে ঘটে।
Our expert general medicine specialists verify the clinical accuracy of the content to deliver the most trusted source of information makine management of health an empowering experience