অ্যান্টিনিউক্লিয়ার অ্যান্টিবডি পরীক্ষা

আমাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা ক্ষতিকর প্যাথোজেন, বিষাক্ত পদার্থ অথবা সংক্রামক জীবাণুকে চিহ্নিত করার জন্য অ্যান্টিবডি এবং প্রোটিন তৈরি করে, ফলতঃ ইহা অনেক সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। তাই জন্য একটি সুস্থ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শরীরকে রক্ষা করার জন্য সাধারণত অ্যান্টিবডি প্রস্তুত করে, কিন্তু কিছু বিরল ঘটনায়, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা নিজের কলা এবং কোশের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে এবং বিশেষত এটি নিউক্লিয়াসকে লক্ষ্য করে তৈরি হয়। এই ধরনের অ্যান্টিবডিগুলিকে বলা হয় অ্যান্টিনিউক্লিয়ার অ্যান্টিবডি।

অ্যান্টিনিউক্লিয়ার অ্যান্টিবডি পরীক্ষা কী?

ডাক্তারদের সুপারিশ করা অ্যান্টিনিউক্লিয়ার অ্যান্টিবডি পরীক্ষা (এএনএ পরীক্ষা) হল একটি রক্ত পরীক্ষা যা রক্তের মধ্যে “অটো অ্যান্টিবডিগুলি”কে চিহ্নিত করে। এই অটোঅ্যান্টিবডিগুলি আপনার কোশকে এবং বিশেষভাবে আপনার ত্বক, পেশি, অস্থিসন্ধি এবং শরীরের অন্যান্য অংশকে আক্রান্ত করে। তাই এএনএ পরীক্ষার ইতিবাচক ফলাফলে অটোঅ্যান্টিবডি গুলির উপস্থিতি বোঝা যায় এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নিজেই আক্রান্ত করা হচ্ছে বোঝা যায়। এটিকে অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া নামেও বলা হয়। যদি আপনার রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস, স্কেলওডারমা অথবা লুপাস থাকে তাহলে আপনার ডাক্তার আপনাকে হয়তো এএনএ পরীক্ষা করানোর সুপারিশ করবেন। কিছু ঘটনায় উপসর্গহীন সুস্থ ব্যক্তির এএনএ পরীক্ষায় ইতিবাচক ফলাফল আসতে পারে।

আপনার ডাক্তার আপনাকে এএনএ পরীক্ষার কথা সুপারিশ করবেন যদি আপনার মধ্যে নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি উপস্থিত থাকে:

• অস্থি সন্ধি এবং/ অথবা পেশিতে যন্ত্রণা, শক্ত হয়ে থাকা অথবা ফুলে থাকা।
• ক্লান্তিকর ভাব
• হালকা সংবেদনশীলতা
• দুর্বলতা
• অবিরাম এবং বারবার জ্বর
• ফুসকুড়ি
• চুল পড়ে যাওয়া
• হাত-পা অসাড় হয়ে যাওয়া এবং কাঁপুনি হওয়া

এএনএ পরীক্ষায় হয়তো প্রয়োজনীয় রোগ নির্ণয় করবেনা কিন্তু অন্যান্য সম্ভাব্য রোগ গুলি বাদ দেবে, যা ডাক্তারের পক্ষে আপনার উপসর্গ বা রোগ নির্ণয় করতে সুবিধা হবে।

এএনএ পরীক্ষায় কী কী ঝুঁকি থাকে?

অ্যান্টিনিউক্লিয়ার অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় খুবই সামান্য, প্রায় উপেক্ষণীয় ঝুঁকি থাকে। যেহেতু এই পরীক্ষাটিতে শিরা থেকে রক্তের নমুনা নিয়ে করা হয়, তাই যেখান থেকে রক্ত নেওয়া হয়েছিল অথবা ছুঁচ ফোটানো হয়েছিল সেখানে আপনি খুবই হালকা যন্ত্রণা অথবা ব্যথা অনুভব করতে পারবেন। যেহেতু এই প্রক্রিয়ায় খুবই অল্প রক্ত নেওয়া হয়, আপনি খুব সম্ভবত এই রক্ত পরীক্ষার পর ক্লান্তি বা অবসন্ন অনুভব করবেন না। রক্ত পরীক্ষার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বেশিরভাগ উপসর্গই চলে যায়।

অ্যান্টিনিউক্লিয়ার অ্যান্টিবডি পরীক্ষার জন্য কীভাবে প্রস্তুত হতে হবে ?

এএনএ পরীক্ষা রক্ত নমুনার প্রয়োজন যে কোন অন্যান্য রক্ত পরীক্ষার মতোই। তাই যদি আপনার ডাক্তারের শুধুমাত্র এএনএ পরীক্ষার জন্য আপনার রক্ত নমুনা লাগে, তবে আপনি পরীক্ষার আগে সাধারণভাবেই খেয়ে এবং জল পান করে যেতে পারেন এবং সঠিক সময়ে নার্সকে নমুনা দিতে পারেন। কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে, ডাক্তার আপনাকে অন্যান্য পরীক্ষার কথাও সুপারিশ করতে পারেন। এটির জন্য রক্তের নমুনা দেওয়ার আগে আপনাকে উপোস ( কিছু সময়ের জন্য না খেয়ে থাকা) করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হবে যদি আপনি রক্ত নমুনা দেওয়ার আগে ডাক্তারের সঙ্গে কী কী প্রয়োজন, সে ব্যাপারে কথা বলে নেন। আপনাকে আপনার চিকিৎসার ইতিহাস এবং বর্তমান ওষুধ বা খাদ্যের বিকল্প যদি কিছু থেকে থাকে তবে তা অবশ্যই দেখাতে হবে.

এএনএ পরীক্ষা থেকে আপনি কী আশা করতে পারেন?

অ্যান্টিনিউক্লিয়ার রক্ত পরীক্ষা সময়ে আপনার থেকে পরীক্ষার জন্য রক্ত সংগ্রহের জন্য একজন প্রযুক্তিকর্মীকে নিযুক্ত করা হবে। একটি ব্যান্ড ( যাকে তুর্নিকেট বলে ) দিয়ে আপনার ঊর্ধ্ববাহুকে বাঁধা হবে যাতে আপনার শিরাকে ফুলে যায় এবং রক্ত সংগ্রহ করা সহজ হয়। ওই জায়গায় একটি অ্যান্টিসেপটিক লাগানো হবে, তারপর ছুঁচ ফোটানো হবে রক্ত টানার জন্য। জায়গাটি আবার অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে পরিষ্কার করা হবে এবং রক্ত একটি নলে ভরে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। এই রক্ত পরীক্ষাটির জন্য শুধুমাত্র কয়েক মিনিট লাগবে এবং তারপর ব্যান্ড খুলে নেওয়া হবে, কর্মীটি পরবর্তী রক্ত বেরোনো আটকাতে ওই জায়গায়একটি ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেবেন।

এএনএ পরীক্ষার সম্ভাব্য ফলাফল গুলি কী কী?

অ্যান্টিনিউক্লিয়ার অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে যা ফলাফল পাওয়া যায় সেগুলি হল:

1. ইতিবাচক : একটি ইতিবাচক ফলাফলের মানে আপনার অটোইমিউন রোগ রয়েছে যা রক্তে অ্যান্টিনিউক্লিয়ার অ্যান্টিবডি প্রস্তুত করছে। কিছু কিছু ঘটনায়, একজন সুস্থ ব্যক্তিরও রক্তে অ্যান্টিনিউক্লিয়ার অ্যান্টিবডি উপস্থিতি পাওয়া যায়। কিছু কিছু সময় আপনার ওষুধও ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে। আপনার এএনএ পরীক্ষার ফল ইতিবাচক হলে আপনার ডাক্তার আপনাকে আরো কিছু পরীক্ষা সুপারিশ করবেন। এগুলি বিশেষত হয় যদি আপনার ক্লান্তি, অস্থিসন্ধি এবং পেশির যন্ত্রণা, এবং জ্বর জাতীয় উপসর্গ থাকে।
2. নেতিবাচক: নেতিবাচক ফলাফল জানায় যে আপনার শরীর কোনো অ্যান্টিনিউক্লিয়ার অ্যান্টিবডি প্রস্তুত করছে না।

কখন ডাক্তার দেখাতে হবে

যদি আপনি দেখেন যে প্রায়ই জ্বর, ফুসকুড়ি, ফুলে যাওয়া এবং অস্থিসন্ধিতে যন্ত্রণা এবং পেশিতে যন্ত্রণা হচ্ছে, তাহলে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে। আপনার ডাক্তার অটোইমিউন রোগ যেমন লুপাস অথবা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস নির্ণয় করার জন্য আপনাকে অ্যান্টিনিউক্লিয়ার অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করতে বলবেন।

সিদ্ধান্ত

একটি অ্যান্টিনিউক্লিয়ার অ্যান্টিবডি পরীক্ষা হল একটি রোগনির্ণয়ের পরীক্ষা যা ডাক্তারের দ্বারা নির্ধারিত অটোইমিউন রোগ। এএনএ পরীক্ষাটি রক্তে অটোঅ্যান্টিবডির উপস্থিতি চিহ্নিত করে। একটি ইতিবাচক পরীক্ষার ফলাফল অটোঅ্যান্টিবডির উপস্থিতিকয়ে চিহ্নিত করে এবং তারই ফলশ্রুতি হিসেবে অটোইমিউন রোগকে নির্দেশ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে উপসর্গহীন একজন সুস্থ ব্যক্তির পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক আসে। তখন ডাক্তার সেই রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ওষুধ নির্ধারিত করতে অন্যান্য পরীক্ষা করতে দেন। এএনএ পরীক্ষাটি কোনো রোগের জন্য নিশ্চিতকরণের পরীক্ষা নয় – এটি আপনার রক্তে অটোঅ্যান্টিবডির উপস্থিতি প্রমাণ করার জন্য সাহায্য করে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)

1. অ্যান্টি নিউক্লিয়ার অ্যান্টিবডি পরীক্ষাটি কি কোন ভাবে বয়সের সাথে সম্পর্কিত?

কিছু কিছু গবেষণা সুপারিশ করে যে রক্তে অবস্থিত অ্যান্টি নিউক্লিয়ার অ্যান্টিবডি বয়সের সাথে সাথে বাড়তে থাকে। তাই 65 বছরের উপরের এক তৃতীয়াংশ বেশিরভাগ সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদেরই এএনএ পরীক্ষায় ইতিবাচক ফলাফল আসে।

2. একটি ইতিবাচক এএনএ পরীক্ষার সাথে কোন কোন সংক্রমণ জড়িত থাকে?

বিকল অনাক্রম্যতা ব্যবস্থার সঙ্গে অনেক রোগ জড়িয়ে থাকার ফলে এএনএ পরীক্ষায় ইতিবাচক ফল আসে। এই সংক্রমণগুলির মধ্যে কিছু হল যকৃতের রোগ যেমন অটো ইমিউন হেপাটাইটিস, সিরোসিস, হেপাটাইটিস সি, হাসিমোটো’র রোগ এবং গ্রেভ’স বর্ণিত রোগ।

3. একটি ইতিবাচক এএনএ পরীক্ষা থেকে উঠে আসা কোন রোগ কি নির্মূল হতে পারে? 

একটি অ্যান্টিনিউক্লিয়ার অ্যান্টিবডি পরীক্ষা কোনো নিশ্চিতকরণ পরীক্ষা নয়। এটি শুধুমাত্র অটোইমিউন রোগ উপস্থিত আছে কিনা সেটি পরীক্ষা করে। কিন্তু কোনো অটোইমিউন রোগ নির্মূল করা সম্ভব নয়। এই উপসর্গগুলি ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে।