বাড়ি Health A-Z অ্যাঞ্জিওগ্রাম: এটা কী? এটা কীভাবে করা হয়

      অ্যাঞ্জিওগ্রাম: এটা কী? এটা কীভাবে করা হয়

      Cardiology Image 1 Verified By Apollo Neurologist October 6, 2022

      8789
      অ্যাঞ্জিওগ্রাম: এটা কী? এটা কীভাবে করা হয়

      নাম থেকেই অনুমান করা যায় যে করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম হল একটি রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি যাতে আপনার ডাক্তার আপনার হৃদপিণ্ডের রক্তবাহগুলিকে দেখতে এবং পরীক্ষা করতে এক্স-রে ব্যবহার করেন। 

      যদি আপনার ডাক্তারের সন্দেহ হয় যে আপনার হৃদপিণ্ডের রক্তপ্রবাহে কিছু একটা বাধা দিচ্ছে, তবে হয়ত তিনি করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম করার সুপারিশ করবেন। এই পদ্ধতিটি বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত সঞ্চালনের একটি স্পষ্ট চিত্র দেয়। অ্যাঞ্জিওগ্রাম ডাক্তারকে ছোট বা বড় রোগ নির্ণয় করতে সাহায্য করে, যেগুলি হৃদপিণ্ডের প্রতি রক্ত সঞ্চালনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, মস্তিষ্ক অথবা দেহের অন্য অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। 

      অ্যাঞ্জিওগ্রাম রক্তবাহের অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করতেও সাহায্য করে, যার মধ্যে হ্রাসপ্রাপ্ত রক্ত বাহ, ধমনীতে চর্বি জমা হওয়া এবং রক্ত তঞ্চন অন্তর্ভুক্ত। 

      কেন অ্যাঞ্জিওগ্রাম করা হয়?

      করোনারি অ্যাথেরোস্কেরোসিস, ভাস্কুলার স্টেনোসিস এবং অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিসমসের মত অনেক কার্ডিওভাস্কুলার রোগ অ্যাঞ্জিওগ্রামের মাধ্যমে নির্ণয় করা যেতে পারে। আপনার ডাক্তার বিভিন্ন কারণে এই পদ্ধতিটিকে সুপারিশ করতে পারে, যেমন:

      • যদি অ্যাঞ্জিনা (বুকে ব্যথা)-এর মত করোনারি ধমনীর রোগ দেখা যায়।
      • যদি বুক, গলা, বা হাত অথবা গালে প্রচণ্ড এবং অস্পষ্ট ব্যথা থাকে। 
      • যদি আপনার নতুন বা হঠাৎ করে বুকে ব্যথার বৃদ্ধি হয়, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে অস্থির অ্যাঞ্জিনা নামে পরিচিত। 
      • যদি আপনার কনজেনিটাল হৃদপিণ্ডের রোগ- জন্ম থেকে হৃদপিণ্ডের ক্ষতি, হয়।
      • যদি ইসিজিতে অথবা কোনো নন-ইনভেসিভ হৃদপিণ্ডের পরীক্ষা হয়, যেমন ব্যায়াম চিন্তার পরীক্ষা, মায়োকার্ডিয়াল পারফিউশন ইমেজিং অথবা ইকোকার্ডিওগ্রাফি। 
      • যদি ডাক্তার অন্য কোনো রক্তবাহ সংক্রান্ত সমস্যা পর্যবেক্ষণ করেন। 
      • যদি আপনার পূর্বের বা বর্তমানের কোনো বুকে আঘাত থেকে থাকে। 
      • যদি আপনার হৃদপিণ্ডের কপাটিকার কোনো সমস্যা থেকে থাকে, যার জন্য সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।
      • যদি আপনার স্ট্রোক, হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে যায় অথবা হার্ট অ্যাটাক হয়। 

      যাইহোক, অ্যাঞ্জিওগ্রাফির সময় জটিলতার একটি সম্ভাবনা থেকে যায়। এই কারণে কোনো নন-ইনভেসিভ হৃদপিণ্ডের পরীক্ষা যেমন হৃদপিণ্ডের উদ্বেগ পরীক্ষা, ইকোকার্ডিওগ্রাম অথবা ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রামের মত পরীক্ষা না হওয়া অবধি এটিকে সরাসরি ব্যবহার করা হয় না। 

      একজন ডাক্তার কেন অ্যাঞ্জিওগ্রামের সুপারিশ করতে পারেন, তার আরো কতগুলি কারণ আছে:

      • সার্জারি করার আগে রক্তবাহের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য
      • রক্তবাহে কোনো টিউমার বেড়ে উঠছে কিনা তা নির্ণয় করতে
      • স্টেন্টিং, করোনারি বাইপাস অথবা কেমিওবোলাইজেশনের মত সমস্যাগুলির জন্য চিকিৎসার পরিকল্পনা করা 
      • সার্জারির পরে একটি স্টেন্টের অবস্থান সঠিক ভাবে পরীক্ষা করার জন্য

      অ্যাঞ্জিওগামের ঝুঁকিগুলি কী কী?

      অন্য যেকোনো হৃদপিণ্ড এবং রক্তবাহেরপদ্ধতি গুলির মতোই করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রামের কিছু ঝুঁকি আছে যেমন এক্স-রে (রেডিয়েশনের) প্রতি উন্মুক্ততা। যদিও কোনরকম প্রবল জটিলতার ঘটনা বিরল। কিছু সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং জটিলতার মধ্যে নিম্নলিখিতগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:

      1. স্ট্রোক
      2. হার্ট অ্যাটাক
      3. অ্যারিথমিয়াস (হৃদপিণ্ডের অনিয়মিত স্পন্দন)
      4. যকৃতের ক্ষতি
      5. সংক্রমণ
      6. রক্ত তঞ্চন
      7. ক্ষত
      8. প্রচণ্ড রক্তপাত
      9. ক্যাথিটারাইজড ধমনীর ক্ষতি 
      10. এই পদ্ধতির জন্য ব্যবহৃত ওষুধ অথবা রঞ্জকের প্রতি অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া

      অ্যাঞ্জিওগ্রাফির জন্য ডাক্তাররা কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?

      কিছু কিছু চরম ক্ষেত্রে, অ্যাঞ্জিওগ্রাফি আপৎকালীন ভিত্তিতে করা হয়। যদিও এই পদ্ধতিটি আগে থেকেই নির্ধারিত করা থাকে যাতে রোগীরা তৈরি হওয়ার সুযোগ পান। 

      কিছু নির্দেশিকা পালন করতে হবে:

      • অ্যাঞ্জিওগ্রাফির আগে কোন খাবার এবং জল খাওয়া যাবে না। 
      • ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে অ্যাঞ্জিওগ্রাফির আগে ডাক্তারের সঙ্গে ইনসুলিনের ডোজ এবং অন্যান্য মৌখিক ওষুধের ব্যাপারে পরামর্শ করে নিন। 
      • বর্তমান ওষুধের জন্য যদি কোনো অ্যালার্জি হয়, তবে তা আপনার ডাক্তারকে জানান। 

      অ্যাঞ্জিওগ্রাফির থেকে কী আশা করা যায়?

      এটি করার আগে 

      অ্যাঞ্জিওগ্রাম শুরু করার আগে আপনার ডাক্তার আপনার চিকিৎসার ইতিহাস পরীক্ষা করবেন, যেমন আপনি কী ওষুধ খাচ্ছেন, অ্যালার্জি ইত্যাদি। চিকিতসাগত ইতিহাসের পর, তিনি আপনার নাড়ির স্পন্দন এবং রক্তচাপ সহ গুরুতর চিহ্নগুলি এবং আপনার শারীরিক পরীক্ষা করবেন। 

      ডাক্তার আপনার চিকিৎসার ইতিহাস পড়ে দেখবেন এবং আপনি যে ওষুধ খাচ্ছেন এবং অ্যালার্জির পরীক্ষা করবেন। 

      আপনার গুরুত্বপূর্ণ চিহ্নগুলি পরীক্ষা করার জন্য তাঁরা শারীরিক পরীক্ষা করবেন। 

      তাঁরা রক্তচাপ ও নাড়ির স্পন্দন পরীক্ষা করবেন। 

      পদ্ধতিটি চলার সময়ে

      অ্যাঞ্জিওগ্রাফির কারণ ও রোগীর বয়সের উপর নির্ভর করে ডাক্তার সিদ্ধান্ত নেবেন যে জেনারেল অ্যানাস্থেশিয়া দেওয়া হবে কি না। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সাধারণত অ্যাঞ্জিওগ্রাফির সময় অ্যানাস্থেশিয়া দেওয়া হয়। 

      আপনার হৃদপিন্ডের একটি পরিষ্কার ছবি পাওয়ার জন্য এক্স-রে মেশিন ঠিকঠাক করার পর ডাক্তার আপনার ত্বকে একটি ছোট্ট ছেদ করবেন যাতে যেকোনো একটি ধমনীতে পৌঁছনো যায়।ছেদ করার জায়গাটিকে অসার করার জন্য রোগীদের লোকাল অ্যানাস্থেসিয়া দেওয়া হয়। 

      প্রবেশের পথে আপনার ডাক্তার একটি ছোট ছেদ করবেন, এবং আপনার ধমনীর মধ্যে একটি শিথ ( ছোট প্লাস্টিক টিউব) ঢোকাবেন। তারপর, তিনি আপনার রক্তবাহের মধ্যে শিথের মাধ্যমে একটি ক্যাথিটার ঢোকাবেন এবং একে আপনার করোনারি ধমনী বা হৃদপিণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে দেবেন। 

      এই পদ্ধতিতে আপনার দেহে ক্যাথিটারের স্থাপন ও নড়ানোর জন্য আপনার কোনো অস্বস্তি বা ব্যথা হবে না। তবুও যদি আপনার এর মধ্যে কোন একটি অনুভব হয়ে থাকে তবে তা আপনার  ডাক্তারকে জানান।

      এর পরে ডাক্তার ক্যাথিটারের মাধ্যমে একটা বিপরীত পদার্থ অথবা রঞ্জক ঢোকাবেন। এই পদ্ধতিতে আপনার কিছুক্ষণের জন্য গরম অনুভব হতে পারে। তবুও আপনার যদি এটায় অস্বস্তি হয়, তবে তা আপনার ডাক্তারকে জানান। এক্স-রে ছবিতে এই বিপরীত উপাদানকে সহজেই চেনা যায়। তাই যখন এটি আপনার রক্তের মধ্য দিয়ে বয়ে যায়, তখন আপনার ডাক্তার দেখবেন যে এটি কোথায় যায় এবং শরীরের মধ্যে কোনো অবরোধের চিহ্ন আছে কিনা। 

      পদ্ধতির ফলাফলের উপর নির্ভর করে আপনার ডাক্তার অবরুদ্ধ অথবা সংকীর্ণ রক্তবাহ খুলে দেবার জন্য অতিরিক্ত ক্যাথিটারের পদ্ধতি যেমন স্টেন্ট বসানো অথবা বেলুন অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টি করতে পারেন। আপনার ব্লকেজ পরীক্ষা করার জন্য আপনার ডাক্তার আল্ট্রাসাউন্ডের মত নন-ইনভেসিভ রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন। 

      আপনার কব্জি অথবা কুঁচকিতে একটি ছোট ছেদ করা হয় এবং তাতে পাতলা, লম্বা এবং নমনীয় নল ধমনীতে প্রবেশ করানো হয়। এক্স-রে ব্যবহার করে হৃদপিণ্ডের যে জায়গায় পরীক্ষা করা হবে সেখানে ক্যাথিটারকে ঢোকানো হয়। 

      নলের মাধ্যমে একটা বিশেষ বিপরীত পদার্থকে ঢোকানো হয় যাতে ডাক্তারদের জন্য দেখা এবং এক্স-রে কে পড়া সহজ নয়। 

      রক্তবাহের মধ্য দিয়ে যখন বিপরীত পদার্থ বয়ে যায় তখন এক্স-রে-এর কতগুলি ছবি তোলা হয়। এটি ডাক্তারকে হৃদপিণ্ডের ব্লকেজ ও অবরুদ্ধ জায়গাগুলি নির্ধারণ করতে ও পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করে। 

      সাধারণত অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করতে এক ঘন্টা লাগে। তবুও পদ্ধতির জটিলতার উপর নির্ভর করে এতে কিছুটা অতিরিক্ত সময়ও লাগতে পারে। 

      পদ্ধতির পরে ।

      যদি কুঁচকির মধ্যে একটি ক্যাথিটারকে ঢোকানো হয়, তবে যাতে রক্তপাত না হয় তার জন্য আপনাকে অনেক ক্ষণের জন্য চিত হয়ে শুয়ে থাকতে হবে। এইরকম সময়ে ওই কাটা অংশে চাপ দেওয়া হবে যাতে আরো রক্তপাত বন্ধ হয় এবং এতে করে রোগীর আরোগ্যও দ্রুত হয়। 

      আপনি সেই দিনই বাড়ি যেতে পারেন বা সেই রাতটা হাসপাতালে থেকে যেতে পারেন। রঞ্জকটিকে আপনার দেহ থেকে বাইরে বার করে দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক তরল পদার্থ পান করতে হবে। যদি আপনার ভালো বোধ হয়, তবে আপনি কিছু খেতে পারেন। 

      কখন ওষুধ খাওয়া, স্নান, কাজ করা এবং অন্যান্য সাধারণ কার্যকলাপ শুরু করতে পারবেন, সে বিষয়ে আপনার মেডিক্যাল টিমকে জিজ্ঞেস করুন। বেশ বহু দিনের জন্য ভারি জিনিস তোলা ও ভারি কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। 

      যেখানে ছেদ করা হয়েছিল, সেখানটা কিছুদিন নরম থাকতে পারে। এতে ক্ষতচিহ্ন থাকতে পারে এবং ফুলে থাকতে পারে।

      পদ্ধতিটির পরের যত্ন।

      • অন্তত 24 ঘন্টার জন্য বিশ্রাম নিন
      •  প্রচুর তরল পদার্থ পান করুন
      •  ধূমপান করবেন না অথবা মদ খাবেন না
      • যেমন বলা হয়েছে তেমন ওষুধ খান

      অ্যাঞ্জিওগ্রাফির পর কী ফলাফল লক্ষ্য করা যায়?

      রক্তবাহের কোন সমস্যা আছে কিনা জানতে ডাক্তারবাবু অ্যাঞ্জিওগ্রাফি পরীক্ষা করে থাকেন। নিম্নলিখিতগুলি নির্ণয় করা যায় :

      • রক্তবাহ ও ধমনী অবরুদ্ধ।
      • রক্তবাহের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া রক্তের পরিমাণ এবং এটি কতটা অবরুদ্ধ হয়েছে।
      • পূর্ববর্তী করোনারি বাইপাস সার্জারির ফলাফল। 

      যখন অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করা হয়, ডাক্তাররা এর পরে কী করবেন তা স্থির করতে পারেন। অ্যাঞ্জিওগ্রাফির ফলাফলের উপর নির্ভর করে আপনার ডাক্তার নিশ্চিত করবেন যে কী ধরণের পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে, যেমন করোনারি অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি। 

      কখন চিকিৎসকের সাহায্য নেবেন?

      অ্যাঞ্জিওগ্রাফির পরে যদি আপনার নিম্নলিখিত কোনো সমস্যা হয়, তবে আপনার তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিৎ :

      • কব্জি বা কুঁচকির কাটা জায়গায় রক্তপাত শুরু হওয়া 
      • যদি পেইনকিলার খেয়েও আপনার কষ্ট লাঘব না হয়
      • যদি ত্বকে জ্বালা ধরে, গরম বা লাল অনুভূত হয়
      • যদি কাটা জায়গার রঙ পরিবর্তিত হয়
      • যদি কাটা জায়গার কাছে শক্ত গোটা হয়
      https://www.askapollo.com/physical-appointment/neurologist

      The content is medically reviewed and verified by highly qualified Neurologists who bring extensive experience as well as their perspective from years of clinical practice, research and patient care

      Cardiology Image 1

      Related Articles

      More Articles

      Most Popular Articles

      More Articles
      © Copyright 2024. Apollo Hospitals Group. All Rights Reserved.
      Book ProHealth Book Appointment
      Request A Call Back X