Verified By Apollo Gynecologist October 12, 2023
35122অ্যাডিনোমায়োসিস একটি রোগ যেখানে জরায়ুর ভেতরের দিকের কলা অর্থাৎ এন্ডোমেট্রিয়াম জরায়ুর পেশীবহুল প্রাচীরের দিকে বাড়তে আরম্ভ করে। অ্যাডিনোমায়োসিসের সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি কিন্তু এটি সাধারণত মেনোপজের সময়ে হয়ে থাকে। এটি মাঝবয়সী মহিলাদের প্রায়শই হয়। প্রতি ঋতুস্রাবের চক্রে এই বিচ্যুত কলা খুবই স্বাভাবিক (স্থূল হয়ে যাওয়া, ভেঙে পড়া এবং রক্তপাত) আচরণ করতে থাকে। এই ফলে জরায়ু আকারে বৃদ্ধি পায় এবং খুবই যন্ত্রণাদায়ক ও ভারি রজঃস্রাব হয়।
এর কারণে তলপেটে ব্যথা হয়, রজঃস্রাবের সময় প্রবল পেটে টান ধরা এবং রজঃস্রাবের আগে পেট ফুলে থাকতে পারে। অ্যাডিনোমায়োসিসের কারণে খুব বেশী রজঃস্রাব হতে পারে।
অ্যাডিনোমায়োসিস সমগ্র জরায়ুকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে অথবা কেবল একটি স্থানেও হতে পারে। অ্যাডিনোমায়োসিসকে প্রাণঘাতী রোগ নয় বলে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এই একটানা যন্ত্রণা এবং অস্বস্তির কারণে একজন মহিলার জীবনযাত্রার গুণমান খারাপ হয়ে যেতে পারে।
অ্যাডিনোমায়োসিস কী?
মাঝবয়সী মহিলাদের ক্ষেত্রে অ্যাডিনোমায়োসিস খুবই সাধারণ এবং অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয়গুলি হল পূর্বেকার শিশুজন্ম এবং তাদের জীবনের কোনো না কোনো সময়ে ঘটা জরায়ুর সার্জারি যেমন ফাইব্রয়েডের অপসারণ এবং শিশুর জন্মের সময়ে সি-সেকশন।
অ্যাডিনোমায়োসিসের যথার্থ কারণ এখনো জানা যায়নি। কিন্তু কিছু তত্ত্বের মতে:
● ইনভেসিভ কলা বৃদ্ধি
জরায়ু মধ্যস্থ কলাস্তরের এন্ডোমেট্রিয়াল কোশগুলি পেশির ভিতরে প্রবেশ করে, যার জন্য জরায়ুর গাত্র নির্মিত হয়। কিছু ক্ষেত্রে, সি-সেকশনে কাতার সময় এন্ডোমেট্রিয়াল কোশ সরাসরি জরায়ুর প্রাচীরে গিয়ে ধাক্কা দিতে পারে, এর ফলে অ্যাডিনোমায়োসিস হতে পারে।
● প্রসবের সময়ে জরায়ুর প্রদাহ
শিশুর জন্ম দেওয়া ও অ্যাডিনোমায়োসিসের মধ্যে একটা যোগসূত্র থাকতে পারে। পোস্টপার্টামের সময় জরায়ুর অভ্যন্তরের প্রদাহের কারণে জরায়ুর কোশগুলির স্বাভাবিক প্রাচীরটি ভেঙে যেতে পারে, যা কারণে অ্যাডিনোমায়োসিস হতে পারে।
● বর্ধিষ্ণু উৎস
যখন ভ্রূণে জরায়ু নির্মিত হয়, তখন জরায়ুর গাত্রে এন্ডোমেট্রিয়াল কলা জমা হয়, যার কারণে পরবর্তী জীবনে অ্যাডিনোমায়োসিস হতে পারে।
অ্যাডিনোমায়োসিসের কারণে নিম্নলিখিতগুলি হতে পারে:
● ভারি রজঃস্রাব
● ডিসমেনোরিয়া – প্রচণ্ড রজঃস্রাব জনিত পেটে টান ধরা
● ডিসপ্যারেউনিয়া – যন্ত্রণাদায়ক যৌন সঙ্গম
● পেট ফুলে থাকা
● পেটে ব্যথা
অ্যাডিনোমায়োসিসের অন্যতম একটি জটিলতা হল তীব্র রক্তাল্পতা। রজঃস্রাবের সময়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রচুর রক্তপাতের কারণে এটি হতে পারে। যদি এর কোনো চিকিৎসা না করা হয়, তবে এর ফলে ক্লান্তি এবং অন্যান্য অসংখ্য রোগ হতে পারে।
অ্যাডিনোমায়োসিসের ঝুঁকিগুলি হল:
● মধ্য বয়স
● বাচ্চার জন্ম দেওয়া
● আগের কোনো জরায়ুর সার্জারি যেমন ফাইব্রয়েড অপসারণ, সি-সেকশন।
অ্যাডিনোমায়োসিসের অধিকাংশ ঘটনাগুলি নির্ভর করে শরীরের ইস্ট্রোজেনের মাত্রার উপর। এটি সাধারণত 40-50 বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে বেশী দেখা যায়। তরুণীরা যদি বেশী সময় ধরে ইস্ট্রোজেনের সংস্পর্শে থাকে, তবে এটি তাদেরও হতে পারে। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে এটি কম বয়সী মহিলাদের ক্ষেত্রেও সাধারণ ব্যাপার হতে পারে।
নিম্নলিখিতগুলির উপর ভিত্তি করে আপনার ডাক্তার হয়ত অ্যাডিনোমায়োসিস সন্দেহ করতে পারেন:
● লক্ষণ এবং উপসর্গ
● একটি পেলভিকের পরীক্ষা, যার কারণে বড় এবং নরম জরায়ু ধরা পড়ে
● জরায়ুর আল্ট্রাসাউন্ড ইমেজ
● জরায়ুর ম্যাগনেটিক রেসোনেন্স ইমেজিং (এমআরআই)
উপসর্গ এবং অবস্থার তীব্রতার উপর চিকিৎসা নির্ভর করে। অল্প উপসর্গ থাকলে তা সাধারণত ওষুধেই কমে যায়।
যেহেতু, প্রায়শই মেনোপজের পরে অ্যাডিনোমায়োসিস নিজেই সেরে যায়, তাই ডাক্তার হয়ত আপনার বয়সের উপর নির্ভর করে আপনাকে চিকিৎসার পরিকল্পনা করে দেবেন।
অ্যাডিনোমায়োসিসের চিকিৎসায় নিম্নলিখিতগুলি অন্তর্ভুক্ত:
● হরমোন থেরাপি
ভারি ও যন্ত্রণাদায়ক রজঃস্রাবের চিকিৎসা করতে হরমোন থেরাপি সাহায্য করে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি প্রদান করার জন্য আপনার জরায়ুতে একটি লিভোনোজেস্ট্রাল-রিলিজিং আইইউডি (ইন্ট্রাইউটেরিন ডিভাইস) প্রবেশ করানো হয়।
● প্রদাহ-বিরোধী ওষুধ
জরায়ুর অ্যাডিনোমায়োসিসের জন্য অল্প ব্যথা কমানোর জন্য, নন স্টেরয়ডাল প্রদাহ বিরোধী ওষুধ যেমন আইবুপ্রোফেন ডাক্তার সুপারিশ করতে পারেন। আপনার মাসিক চক্র শুরু হবার দুই থেকে তিনদিন আগে এই ওষুধ চালু করতে হবে এবং আপনার মাসিক চক্র শেষ না হওয়া অবধি এটি খেয়ে যেতে হবে। এটি রজঃস্রাবের পরিমাণ কমাতে ও ব্যথা কমাতে ব্যবহৃত হয়।
● জরায়ুর ধমনী এম্বোলাইজেশন
এই পদ্ধতিটি জরায়ুর ফাইব্রয়েডগুলিকে কুঁচকানোর জন্য সাধারণত ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতিটি কিছু ধমনীকে ক্ষ্রতিগ্রস্ত স্থানে রক্ত সরবরাহ করতে বাধা দেয়। যেহেতু রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, তাই তখন অ্যাডিনোমায়োসিস কুঁচকে যায়।
● এন্ডোমেট্রিয়ালের অপসারণ
কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে যেখানে অ্যাডিনোমায়োসিস পেশির প্রাচীরে গভীরভাবে ঢুকতে পারেনি, সেখানে এই পদ্ধতি যথেষ্ট কার্যকরী। এটি অ্যাডিনোমায়োসিস আক্রান্ত জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়াল প্রাচীরকে নষ্ট করে দেয়।
● হিস্টিরেক্টমি
খুব গুরুতর ক্ষেত্রে ডাক্তার হিস্টেরেকটমির সুপারিশ করতে পারেন. এটি হলো অ্যাডিনোমায়োসিস আক্রান্ত জরায়ুর অপসারণ। অ্যাডিনোমায়োসিসকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ডিম্বাশয়ের অপসারণ করার দরকার নাও হতে পারে।
অ্যাডিনোমায়োসিস সংক্রান্ত প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন:
● অ্যাডিনোমায়োসিস কেন বেড়ে যায়?
কিছু কিছু তত্ত্বের মতে, আগেকার জরায়ুর সার্জারি, বয়স জনিত কারণে অথবা অন্যান্য অসংখ্য কারণের জন্য এই রোগ হতে পারে। অল্প বয়সী মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি সময় ধরে ইস্ট্রোজেনের সংস্পর্শে থাকলে তাদের ক্ষেত্রে এই রোগটি হবার সম্ভাবনা আছে।
The content is verified by our experienced Gynecologists who also regularly review the content to help ensure that the information you receive is accurate, evidence based and reliable