সামগ্রিক ধারণা
প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি এবং শিশুদের মধ্যে প্রায়ই নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা যায়। আপনার নাসাপথের অভ্যন্তরের ঝিল্লিগুলির প্রদাহ সৃষ্টি হয়, তখন আপনার গুমোট মনে হতে পারে এবং নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া বলতে কী বোঝায়?
নাসাপথের ঝিল্লিগুলির প্রদাহ বা অস্বস্তির ফলে নাকে যে গুমোট ভাব তৈরি হয়, তাকে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া বলা হয়। যখন নাকের রক্তবাহগুলি ফুলে যায়, তার ফলেও নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা, অ্যালার্জি অথবা সাইনাসের সংক্রমণের সঙ্গে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া সংযুক্ত হতে পারে।
উপসর্গগুলি কী কী?
নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রায়শই সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা অথবা সাইনাস সংক্রান্ত সমস্যার নানা উপসর্গগুলির একটি অংশ, যেমন:
- অতিরিক্ত শ্লেষ্মা তৈরি হওয়া।
- নাকের ভেতর গুমোট অনুভব করা।
- নাক দিয়ে জল পড়া।
- যন্ত্রণাদায়ক সাইনাস।
- সাইনাসের সংক্রমণের জন্য মুখের ব্যথা।
- শ্বাস নেবার অসুবিধে।
- সাইনাসের চাপ।
কী কারণে নাক বন্ধ হয়ে যায়?
ঝিল্লির প্রদাহ এবং নাসাপথের অবরুদ্ধতার অনেক কারণ থাকতে পারে।
- সাধারণ ঠাণ্ডা লাগা।
- ফ্লু অথবা সাইনাসের সংক্রমণ।
- অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে আসা।
- গরম এবং শুষ্ক বাতাসে শ্বাস নেওয়া।
- অ্যালার্জির সঙ্গে সম্পর্কিত হাঁচি।
- মশলাদার খাবার খাওয়া।
- মদ্যপান করা।
- উদ্বেগ।
- সিগারেট খাওয়া অথবা শিল্পজাত ধোঁয়া প্রশ্বাসের মাধ্যমে ভেতরে নেওয়া।
- নাকের অঙ্গসংস্থানগত সমস্যা, যেমন বিচ্যুত নাসামধ্য পর্দা।
- ডিকঞ্জেস্ট্যান্টের অতিরিক্ত ব্যবহার।
- ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসা।
- নাসাপথে সৃষ্ট পলিপ।
- হরমোনের পরিবর্তন।
- শ্বাসকষ্ট।
- রক্তচাপ, সিজার এবং ডিপ্রেশনের জন্য ব্যবহৃত কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ।
কখন ডাক্তার দেখাতে যাবেন?
নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া কোনো গুরুতর অসুখ নয় যে এর কোনো গুরুতর স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ঝুঁকি থাকবে। তবে যদি আপনি 10 দিনের উপর একই রকম নাক বন্ধ থাকা অনুভব করেন এবং তার সাথে সাথে আপনার জ্বর, শ্বাসকষ্ট অথবা অন্য কোন অস্বস্তি থেকে থাকে, তবে একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন যদি কোনো সংক্রমণ বা এলার্জির কারণে নাক বন্ধ হয়ে থাকে, তবে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার পরেই চিকিৎসা শুরু করা সবচেয়ে ভালো।
নাক বন্ধ হয়ে থাকার চিকিৎসা কী করে করবেন?
নাক বন্ধ থাকার কারণটি চিকিৎসক খুঁজে বার করার পর, তিনি বেশ কিছু চিকিৎসার বিকল্প দিতে পারেন, যেমন, নাকের স্প্রে, অ্যালার্জির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক, ওটিসি ওষুধ এবং ব্যথা উপশমকারী ওষুধ।
নাক বন্ধ থাকার চিকিৎসার জন্য ঘরোয়া টোটকা:
যদি আপনি নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যায় ভুগে থাকেন, তবে বেশ কিছু ঘরোয়া টোটকাও খুব সাহায্য করতে পারে।
- আর্দ্রকারী পদার্থ: ঘরটিকে আর্দ্র রাখার জন্য একটি আর্দ্রকারী পদার্থ ব্যবহার করুন এবং নাসাপথের প্রদাহ চলা ঝিল্লিগুলিকে কিছুটা আরাম দিন। শুষ্ক হাওয়া আপনার নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। গরম এবং শুষ্ক আবহাওয়ায় নাক বন্ধের পরিস্থিতি আরো খারাপ দিকে যেতে পারে। ক্রমাগত একটি আর্দ্রকারী পদার্থ ব্যবহার করলে আপনার চারিদিকে আপনার কাঙ্ক্ষিত আর্দ্রতা বজায় থাকে।
- প্রশ্বাসের মাধ্যমে বাষ্প গ্রহণ করা: প্রশ্বাসের মাধ্যমে বাষ্প গ্রহণ করলে সাহায্য হতে পারে, কিন্তু আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে আপনি ফুটন্ত জল দিয়ে নিজেকে পুড়িয়ে না ফেলেন। বেসিন বা একটি বড় বাটিতে ফুটন্ত জল রাখুন এবং এটিকে একটি টেবিলে রেখে দিন। তারপর টেবিলের কাছে একটি চেয়ারে বসুন এবং আপনার মুখটিকে বেসিন বা বাটির উপর নিয়ে আসুন। 5 থেকে 10 মিনিটের জন্য সাধারণভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। এছাড়া আপনি যে কোন ওষুধের দোকান থেকে একটি স্টিম কাপ কিনতে পারেন। স্টিম কাপ হল একটি ঢাকনা এবং মাস্ক যুক্ত প্লাস্টিকের কাপ আপনি ফুটন্ত জল থেকে কাপের মধ্যে ঢালতে পারেন। তারপর ঢাকনা এবং মাস্ককে ঠিক করে এই মাস্কের মধ্য দিয়ে বাষ্পকে প্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারেন। শিশুদের জন্য বাষ্প প্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করার সবচেয়ে সুরক্ষিত উপায় হচ্ছে এটিকে শৌচালয় করা। আপনার শৌচালয়ের দরজা বন্ধ করে দিন এবং গরম জলের নল খুলে দিন।
- আর্দ্রতা: আপনার জল পানের মাত্রা বাড়িয়ে দিন। আর্দ্র থাকলে আপনার দেহ ক্ষতিকারক পদার্থগুলিকে দেহ থেকে সহজে বার করে দিতে পারে এবং আপনার সাইনাস থেকে শ্লেষ্মাগুলিকে পরিষ্কার করে দেয়। স্যুপ, ব্রথের মত গরম পানীয় পদার্থ পান করলে তা নাক বন্ধ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- গরম চাপ দেওয়া: উষ্ণ চাপ প্রয়োগ করলে পুরু শ্লেষ্মার স্তর খুলে যেতে পারে। যদি আপনার নাক বন্ধ থাকে, তাহলে উষ্ণ চাপ প্রয়োগ করলে আপনার তাৎক্ষণিক আরাম বোধ হবে। একটি তোয়ালেকে গরম জলে ভিজিয়ে নিন এবং জল থেকে বার করে নিংড় নিন। এরপর আপনার নাকের উপর দিয়ে এই উষ্ণতা তোয়ালেটিকে 30 সেকেন্ডের জন্য রাখুন এবং নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এটির বেশ কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করুন।
- আপনার অ্যালার্জির চিকিৎসা করুন: নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য মূল দোষী হলো অ্যালার্জেন। যে অ্যালার্জেনের কারণে আপনার নাক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেটি খুঁজে বার করুন এবং সেটি থেকে দূরে থাকুন। অ্যালার্জির ওষুধের জন্য একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
- উত্তোলন পন্থা ব্যবহার করুন: আপনি যখন ঘুমাবেন, তখন আপনার মাথাটিকে কিছুটা উঠিয়ে রাখুন। এর ফলে আপনার শ্বাস নিতে সুবিধা হবে। আপনার মুখের ওপর একটি গরম তোয়ালে রাখতে পারেন, যাতে আপনি সহজে শ্বাস নিতে পারেন।
- নাকের ড্রপ ব্যবহার করুন: ডিকঞ্জেস্ট্যান্ট স্প্রে এবং ড্রপ বন্ধ হয়ে যাওয়া নাকের জন্য খুবই কার্যকরী। এটি আপনার নাকে খুব তাড়াতাড়ি খুলে দিতে সাহায্য করবে কিন্তু এগুলি সর্বাধিক পাঁচ থেকে সাত দিনের জন্যই কেবলমাত্র ব্যবহার করা উচিত যদি তার থেকে বেশি সময় ধরে এটি ব্যবহার করা হয় তবে এটি পুনরায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। 6 বছর বা তার থেকে ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ডিকঞ্জেস্ট্যান্ট স্প্রে এবং ড্রপ ব্যবহার করা যাবে না।
উপসংহার
নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জীবনের কোনো ঝুঁকি হয় না। এর উদ্দীপক এবং অন্তর্নিহিত কারণগুলি খুঁজে বার করতে পারলে একে সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রাপ্তবয়স্ক এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই যেকোনো রকম জীবনের ঝুঁকি সৃষ্টিকারী জটিলতা এড়ানোর জন্য অ্যালার্জির চিকিৎসা করা উচিৎ।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)
সদ্যোজাতদের কি নাক বন্ধ হতে পারে?
সদ্যোজাতদেরও নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যার জন্য তাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে। যদি আপনার সন্তানের জ্বরসহ শ্বাস-প্রশ্বাসের নানা সমস্যা দেখা দেয়, তবে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
নাক বন্ধ হয়ে গেলে কি আমি নাক ঝাড়তে পারি?
নাক ঝাড়লে নাক বন্ধের পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে চলে যায় কারণ এতে নাসাপথের ঝিল্লিগুলির রক্তবাহগুলিতে চাপ সৃষ্টি করে। সাইনাসের চাপ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য শ্লেষ্মা থেকে মুক্তি পান।
নাক কতক্ষণ বন্ধ থাকতে পারে??
দশ দিন পর্যন্ত নাক বন্ধ করতে পারে এবং এটি নিজে নিজেই খুলে যেতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। গুরুতরভাবে নাক বন্ধ হয়ে গেলে তা কয়েক মাস পর্যন্ত থাকতে পারে।